স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় ঘন ঘন লোডশেডিং : নাকাল জনজীবন

চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ, বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে আরও চার- পাঁচ দিন থাকতে পারে লোডশেডিং

মুশফিকুর রহমান মেহেদী ঃ একদিকে চৈত্র মাসের তীব্র তাপদাহ, অপর দিকে ঘন ঘন লোডশেডিং। এ যেন ঠিক মরার উপর খাড়ার ঘা। গত ৩ দিন যাবৎ খুলনা শহরে তীব্র লোডশেডিং’এ নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরমের হাসফাস অবস্থায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে খুলনাবাসী। সামান্য গরমেই যেখানে বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিহার্য, সেখানে রেকর্ডিও তাপমাত্রায় ঘন ঘন হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট । গন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে প্রায় শতভাগ পরিবার বিদ্যুৎতের দেখা পেয়েছে। তবে বর্তমানে বিদ্যুৎ এর সংযোগ শতভাগ থাকলেও অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎতের ব্যাপক লোডশেডিং জনজীবনকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। রোজাদাররা পড়ছেন বিপাকে। ঘরে-বাইরে নেই শান্তি। সেহরি, ইফতার ও তারাবিতে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। ওজোপাডিকোর সূত্রমতে, গতকাল ২ এপ্রিল খুলনা সাউথ ডিভিশনে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪০ কিলোওয়াট। কিন্তু সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ছিল মাত্র ২০ কিলোওয়াট। গতকাল ৩ এপ্রিল এই ডিভিশনে বিদ্যুতের একই চাহিদা থাকলেও সরবরাহের জন্য প্রস্তুত ছিল ৩০ কিলোওয়াট। প্রায় অর্ধেক পরিমান বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় এই বিভ্রাট হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুত্রটি। এছাড়া আগামী ৪ থেকে ৫ দিন এমন লোডশেডিং থাকতে পারে বলে জানায় সূত্রটি। এদিকে কেউ কেউ আইপিএস বা জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুতের অভাব মেটালেও দুর্মূল্যের বাজারে গরিব-খেটেখাওয়া মানুষের পক্ষে মোমবাতি জোগাড় করাই কষ্টসাধ্য। বিদ্যুৎ সংকটে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে প্রচ- গরমে হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালে রোগীদের সেবায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। খুলনার একটি বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, সারাক্ষণ বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে রোগীদের ঠিকমতো সেবা দিতে পারছি না। এছাড়া রোজাদার না রাতে ঘুমাতে পারছেন, না দিনে। সাহরি, ইফতার এবং তারাবীতেও নেই শান্তি। শহরের বিভিন্ন স্থানের ঈদ মার্কেট গুলোতে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে । পানির টাংকিতে পানি না থাকায় পারছেন না গোসল করতে। ঈদ মার্কেটে গিয়ে পারছেন না সুখে শান্তিতে ঈদ মার্কেটিং করতে। খুলনা চিত্রালী সুপার মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা জামাল মোড়ল জানান, “গতরাতে সর্বমোট বিদ্যুৎ ১ ঘন্টা করে থাকছে। আমাদের ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটেছে, সকালবেলা একটু ঘুমাবো তাও শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। সকাল থেকে আবারও লোডশেডিং শুরু, এ সুযোগে আসলাম ঈদের কেনাকাটা করতে এখানেও শান্তিতে দোকানে কেনাকাটা করা যাচ্ছে না”। খুলনার মোহাম্মদনগর এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ আলী জানান, “মাস শেষে আমরা ঠিকই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি, কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই এ ভোগান্তি আর কতদিন”। বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল হারেস জানান “মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে সাহরি ও ইফতার ঠিকমতো করতে পারিনা। তারাবি কিংবা তাহাজ্জুদে একটু প্রশান্তি নিব তাও সম্ভব হয় না। শুধু মাহে রমজান আসলেই কেন এমনটা হয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রশ্ন। স্থানীয় অটোচালক মোঃ রাকিবুল ইসলাম জানান “আমাদের রিজিক অন্বেষণ এর একমাত্র পথ এ ইজিবাইক। রাতে চার্জ না হওয়ার কারণে দিনের বেলা অটো নিয়ে বের হতে পারি না। ফলে দৈনন্দিন বাজার করা বন্ধ। ইফতারও করতে পারিনা, ঈদের কেনাকাটাও করা হয়নি”। তবে এব্যাপারে ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা মাহামুদুল হক জানান, জেনারেশন গ্যাপের কারনে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতির কারনেই ঘন ঘন লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে । তবে , পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী ঈদের পূর্বমুহূর্তে কমে যাবে লোডশেডিং। এছাড়া জানা যায় অতিরিক্ত গরমের কারনে অনেকেই এয়ার কন্ডিশন ও, বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়ে রাখছে সর্বত্র। ফলে আরো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button