স্থানীয় সংবাদ

কালিয়ায় প্রধান বিরুদ্ধে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্যের জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

দূর্ণীতি দমন কমিশনসহ ৭টি দপ্তরে অভিযোগ দাখিল

কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধি ঃ নড়াইল জেলাধীন কালিয়া উপজেলার পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল দলিল করে অন্যের জমি স্কুলের নামে করার অভিযোগ উঠেছে। জমির জাল দলিল করে এমপিওভুক্ত করেছেন বিদ্যালয়। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কালিয়া উপজেলার চানপুর গ্রামে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। তিনি জবাবদিহিতার অভাবে একাধিকবার পার পেয়ে গেছেন। এই প্রধান শিক্ষকের নাম শেখ মোঃ আনিছুর রহমান। তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ আনিছুর রহমানের দুর্নীতির চিত্র। দুর্নীতি এবং জালিয়াতির কারণে বিদ্যালয়ের সঠিক পাঠদান নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ আনিছুর রহমান বেশিরভাগ সময় থাকেন খুলনা জেলা শহরে। অন্যদিকে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিজের আয়ত্তে রেখে করছেন একের পর এক দুর্নীতি ও অনিয়ম। তার স্ত্রী অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে যান না বললেই চলে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে পঞ্চপল্লী শহীদ জিয়া নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। তার কিছুদিন পর পঞ্চপল্লী শহীদ জিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামকরন করে এমপিওভুক্ত করা হয়। কিন্তু এই স্কুলের জমি জালিয়াতি করে বিদ্যালয় এমপিও ভুক্ত করেন প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ আনিছুর রহমান। বিদ্যালয়ের বর্তমান দপ্তরিকে মালিক সাজিয়ে সকলের অগোচরে জমির জাল দলিল করে এমপিওভুক্তি করেন শেখ মোঃ আনিছুর রহমান। শেখ মোঃ আনিছুর রহমানের শশুর খলিলুর রহমান নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বিএনপির সভাপতি হওয়াতে তৎকালীন সময়ে প্রভাব খাটিয়ে এ অবৈধ কাজ করেছেন। আনিসুর রহমান সকল অপরাধ গোপন রাখতেই তার শ্বশুর খলিলুর রহমানকে তৎকালীন সময়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করেন। প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ আনিছুর রহমান প্রায় ১৫ বছর তার শ্বশুরের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অবৈধকে বৈধ করেছেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত খলিলুর রহমান দুটি বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে বহাল ছিলেন। পরবর্তীতে এই শেখ মোঃ আনিছুর রহমান নিজের স্ত্রীকেই সহকারী শিক্ষক হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি তার স্ত্রীকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা করার জন্যই এ কাজ করেছেন। বিদ্যালয়ে না এসেও বেতন তুলে নিচ্ছেন তার স্ত্রী। যার জবাবদিহিতা করার মতো কেউ নেই। অন্যদিকে শেখ মোঃ আনিছুর রহমান নিজের শ্যালককেই ম্যানেজিং কমিটির জমির দাঁতা সদস্য করে বহাল রেখেছেন। বর্তমান স্কুলের দপ্তরি সদর আলী শেখকে দিয়ে করিয়েছেন নানান অবৈধ কাজ। যা গোপন রাখতেই দপ্তরি পদে সদর আলী শেখকে নিয়োগ দিয়েছেন। সদর আলী শেখের মাধ্যমে জাল দলিল করে এবং জমির মূল মালিক সাজিয়ে জমির জাল দলিল করেন শেখ মোঃ আনিছুর রহমান। যার কারনেই এই সদর আলীকেই পরবর্তীতে নিয়োগ দেয়া হয় স্কুলের দপ্তরি হিসেবে। সরকারী জলাশয় ব্যবহার করে অর্জিত অর্থ সরকারী খাতে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করছেন শেখ মোঃ আনিছুর রহমান। সদর আলী শেখকে দিয়ে তিনি এ কাজ করাচ্ছেন। তথ্যসূত্রে দেখা যায়, পঞ্চপল্লী শহীদ জিয়া নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল এবং পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমির প্রকৃত মালিক মোট চারজন। ১. উপেন্দ্রনাথ বালা ২. সুরেন্দ্রনাথ বালা, ৩. সুদির কুমার বালা, ৪. অধির কুমার বালা। সকলের পিতা একই জলধর বালা। তারা কেউই জমি স্কুলের নামে লিখে দেননি। অন্য একটি অভিযোগ সূত্র বলছে, কালিয়ার বাসিন্দা আবুল খায়ের ঠাকুর, আবুল বাশার ঠাকুর, আবুল হোসেন ঠাকুরদের জমি জোরপূর্বক ভুয়া দদিল বানিয়ে দখল করে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ আনিছুর রহমান। ২০১৩ সালে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগিরা। আদালত যাচাই-বাছাই করে ভুক্তভোগিদের পক্ষে রায় দিলেও জোর করে জমি দখল করে রেখেছেন শেখ মোঃ আনিছুর রহমান। যার মামলা নং ছিলো ১৩৭০। পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি সদর আলী শেখের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ আনিছুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, “এক ব্যক্তি সর্বক্ষণ বিভিন্ন দপ্তরে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েই যাচ্ছেন যার কোন ভিত্তি নেই। বিষয়টি নিয়ে শুধুমাত্র কালিয়া থানা থেকে তদন্ত এসেছিল তার তদন্ত প্রতিবেদন আমার কাছে আছে।” দুদকসহ ৭ দপ্তরে শেখ মোঃ আনিছুর রহমানের নামে অভিযোগ দাখিল করেছেন নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামের মো. উজির হোসেনের ছেলে মোঃ হোসাইন। তার জমিটিও জাল করে ওই বিদ্যালয়ের নামে দলিল করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী মোঃ হোসাইন দূর্ণীতি দমন কমিশনে গত ১২ মার্চ, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্য নড়াইল ১ কবিরুল হক (মুক্তি), ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কালিয়া থানা ও পুলিশ সুপার নড়াইল বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এছাড়াও গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মেয়র কালিয়া পৌরসভা, গত ১৩ মার্চ সহকারি কমিশনার (ভূমি), কালিয়া নড়াইল, গত ২৫ মার্চ বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা, খুলনা ও গত ১ এপ্রিল উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর বরাবর অভিযোগ দাখিল করেও অদ্যাবধি কোন সমাধান পাননি। ওই প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে কাগজপত্র জাল করেন এবং অবৈধভাবে সম্পত্তি দখল করেন এমন অভিযোগের একটি সুষ্ঠু তদন্ত দূর্ণীতি দমন কমিশন খুলনা হতে পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button