দিঘলিয়ায় অবাধে চলছে মাদক ও জুয়ার রমরমা আসর : যুব সমাজ হচ্ছে বিপথগামী
সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনা থেকে ঃ
দিঘলিয়া উপজেলায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বেড়েই চলেছে রমরমা মাদক ব্যবসা ও জুয়া আসর। মাদক ব্যবসা থেকে বাদ পড়েনি নারী-পুরুষ কেউই। উপজেলার পাড়া-মহল্লায় অনেকটা খোলামেলাভাবেই চলছে মাদক বেচাকেনা ও জুয়ার আসর। কাঁচা অর্থ লোভে কিশোর ও যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে এসব ব্যবসায়। যুব সমাজ হচ্ছে বিপথগামী। ফলে পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা নেমে আসছে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মাঝে-মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে ছিচকে মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়ীদের আটক করলেও মূল মাদক ব্যবসায়ী জুয়ার আসরের আয়োজকরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। যার কারণে থামানো যাচ্ছেনা মাদক ও জুয়ার আসরসমুহ। তবে মাঝে-মধ্যে পুলিশী অভিযানে মাদকসহ বিক্রেতা আটক হলেও আদালত থেকে আইনের ফাঁকফোঁকড়ে জামিনে বেরিয়ে আবার মাদক ব্যবসা শুরু করছে দ্বিগুণ উৎসাহে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ও মাদক সেবনকারী ও জুয়া খেলায় জড়িতদের দেয়া তথ্যমতে জানা গেছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কেনা-বেচা হচ্ছে দেশীয় প্রদ্ধতিতে তৈরী চোলাই মদ, হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেট আর গাঁজা। এছাড়া উপজেলার দেয়াড়া খেয়াঘাট, দেয়াড়া কলোনীঘাট ও বারাকপুর সিদ্বিপাশা খেয়াঘাট দিয়ে আসা নানা নেশাদ্রব্যসহ অবাধে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে আসা ফেনসেডিল, হুইসকি, অফিসার চয়েস, রাম, বিয়ার, ভটকাসহ ইয়াবা ইত্যাদি। সম্প্রতি দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের দেয়াড়া ও ফরমাইশখানা গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি নেশাদ্রব্য নিয়ে আসার পথে কক্সবাজার এলাকায় সেনাবাহিনীর হাতে আটক হয়েছে ফরমাইশখানা গ্রামের হামিদ শেখের পুত্র শায়েস্তা খা। এদিকে নেশা দ্রব্যের বলি হয়েছে (অকালে মারা গেছে) একই গ্রামের নুরুর পুত্র আমীর হামজা নামে এক যুবক।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে এ মাদকের আধিক্যতা বেশি। পাশাপাশি বস্তি এলাকার উঠতি বয়সের যুবকরা মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে একশ্রেণীর সুযোগ সন্ধানীরা সেনহাটি ইউনিয়নের হাজীগ্রামের বেলেঘাট ও নির্মাণাধীন মিনিস্টেডিয়াম এলাকা, বাতিভীটা, পথেরবাজার স্কুলের পিছনে, কাটানিপাড়া স্কুল এলাকা, বোগদিয়া, দক্ষিণ চন্দনীমহল, সরিষাপাড়া, সরোয়ার খান কলেজের পিছনে, সুগন্ধি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা ও বাগানে, শিববাড়ি মন্দিরের পিছন এলাকা, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স গলি, কেসিআই ক্লাব এলাকা, লিচুতলা মোড়, রেজার মোড়। দিঘলিয়া ইউনিয়নের মহেশ্বরপুর, দিঘলিয়া কলেজের পিছনে ও নদীর কূল এলাকা, ভৈরব আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকা, দিঘলিয়া ৩ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন মোড়ে ও ভৈরব নদীর কূলে, নগরঘাট ফাঁকামাঠ, দেয়াড়া কলোনী, দেয়াড়া পূর্বপাড়া বিভিন্ন বাগান ও কবরস্থানের পিছনে গলির মাঝে, কহিনুর স্কুল এলাকা, দেয়াড়া খেয়াঘাট, দেয়াড়া জ্ঞানীর মোড়, ফরমাইশখানা গ্রামের নাককাটি খাল ব্রীজের উত্তরপাশের রাস্তা, মিতালী সংঘের আাশপাশ ও ভৈরব নদী কূল, কাঁঠালতলার আশপাশ, সেনহাটি স্কুলের পিছনে, পালপাড়া মোড়, ফরমাইশখানা পূর্বপাড়া। এছাড়া বারাকপুর ইউনিয়নের ঘোষগাতী মোড়, ক্যাবলঘাটের আশপাশ, লাখোহাটির বিভিন্ন মোড় ও ঘের এলাকা, নন্দনপ্রতাপ স্কুল ব্রীজের আশপাশ নানা মাদক বিক্রির স্পট। এছাড়া মাদক বেচাকেনাসহ ও জুয়ার আসর চলে কেরাম, লুডু, তাসসহ নানা খেলার ছলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দৌলতপুর খেয়াঘাট, দেয়াড়া কলোনী, মহেশ্বরপুর, সেনহাটি মসজিদ পাড়া, হাজীগ্রাম নির্মাণাধীন মিনিস্টেডিয়াম ও আবাসন প্রকল্পের পাশে, স্টার ২নং গেট এলাকা, চন্দনীমহল বাজারের আশপাশ, দক্ষিণ চন্দনীমহল, সরোয়ার খান কলেজের পিছনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার বিভিন্ন এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, আমারা প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকিও দেয়। তারা কিছু পুলিশ সদস্যকে ম্যানেজ করে ও এলাকার কিছু প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধির পৃষ্ঠপোষকতায় মাদক ব্যবসা ও জুয়া পরিচালনা করে। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে কোন লাভ হবে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদেরই পুলিশের ও সামাজিকভাবে হয়রানীর শিকার হতে হয়। আশেপাশের প্রায় সব গ্রামে মাদক বিক্রি হয়। আমাদের সন্তানদের নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচ এম শাহিন বলেন, আমি নতুন এসেছি। আমি কি করব এবং কি করতে পারব তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে চাই।অবাধে মাদক ও জুয়ার আসর চলার কোন সুযোগ নেই। জুয়া ও মাদকের ব্যাপারে আমরা সোচ্চার। জুয়া ও মাদক বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে।