স্থানীয় সংবাদ

দিনে রাতে সমান তালে মশার উৎপাত : অতিষ্ঠ খুলনাবাসী

কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনায় শীতের আগমনের সঙ্গে বাড়ছে মশার উৎপাত। এর হাত থেকে মশারি, কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও রক্ষা করতে পারছে না নগরীর বাসিন্দা। দিন-রাত মশার অসহনীয় যন্ত্রনা ভোগ করছে খুলনাবাসী। দিনের বেলায় শিশুরা ঘুমাতে গেলে বাসা-বাড়িগুলোয় অনেকে সারাদিন মশারি টাঙিয়ে রাখছেন। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন উপায়ে মশা দমনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। একটু পরেই যা তাই।
এদিকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল খুলনায়। মশার উপদ্রব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। মশাবাহিত অন্যান্য রোগব্যাধিরও ঝুঁকি বাড়ছে।
নগরীর ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, শীত শুরু হতেই মশার উপদ্রব বেড়েছে ব্যাপকহারে। দিন-রাত সমানতালে মশার অত্যাচার চলছে। বাসায় ৮ মাসের বাচ্চা আছে, বয়স্ক মানূষও আছে। তাদের জন্য সারাদিন মশারি টাঙিয়ে রাখতে হচ্ছে। কয়েল, ইলেকট্রিক ব্যাট-কিছুই মানে না। গোবরচাকা এলাকার বাসিন্দা আ: জলিল বলেন. দিন দিন ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্বি পাওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েকদিন আগে তার চাচাতো ভাই ডেঙ্গু রোগীতে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মশা নিধনে খুলনা সিটি কর্পোরেশন থেকে মাঝে মধ্যে ফগার মেশিনের শব্দ শুনি। কিন্তু মশা মরে না। তাই এ ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। গৃহবধু সুখি আক্তার বলেন, একটা জায়গায় দুই মিনিট দাঁড়ানো যায় না। মৌমাছির মতো মশা ঘিরে ধরে । ভুক্তভোগীরা বলছেন, কেসিসি থেকে ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধের ধোঁয়া দিয়ে গেলেও মশার উপদ্রব কমছে না বরং ফগার মেশিনের ধোঁয়ায় ধাক্কায় ড্রেনে থাকা মশাগুলোও ছড়িয়ে পড়ে এবং সেগুলো ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। ভুক্তভোগীদের অভিমত, মশার উৎপত্তিস্থল হিসেবে পরিচিত ড্রেন ও স্যুয়ারেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে দিনের পর দিন ফেলে রাখায় তাতে পানি জমে। যা মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন তত্ত্ববধায়ক পৌকশলী ( যান্ত্রিক) ও বজ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো: আব্দুল আজিজ বলেন, নগরীর ৩১ ওয়ার্ডে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধনের ক্র্যাস প্রোগ্রাম গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে। কার্যক্রম থেকে নেই। তিনি বলেন, এই মৌসুমে মশার একটু উৎপাত বাড়তি থাকে। কিছুদিনের মধ্যে তা আবার কমে যায়। ৭৭ কর্মীকে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে খুলনা সিটি কর্পোরেশন কনজারভেনসি অফিসার মোা: ওয়াহিদুজ্জামান খান বলেন, নগরীতে মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে বলে তিনি জানান। কবে থেকে শুরু হয়ে এ বিষয়ে তিনি বলতে পারেন না উল্লেখ করেন তার উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মশার উৎপাত ভয়াবহ বেড়েছে। নগরীতে নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। অথচ প্রতি বছর মশা মারার জন্য সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। মাঝেমধ্যে নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তাতে মশা মরে না। বরং তাড়া খেয়ে মশা ঘরে ঢুকে যায়। এদিকে খুলনা বিভাগের মধ্যে এবার সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিক থেকে খুলনা জেলা এগিয়ে রয়েছে। এদিকে মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গুর আতঙ্কে রয়েছে নগরবাসী। প্রতিদিনই খুলনায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগের মধ্যে খুলনায় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর মৃত্যুতে সর্বোচ্চ সংখ্যা রয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছাড়াল ৮ হাজার ২১২ জন এবং মোট মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। এর মধ্যে খুমেক হাসপাতালে চিবিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু রোগী মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের । এছাড়া খুলনায় ৩ জন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, যশোরে ৩ জন, ঝিনাইদহ ১ জন এবং কুষ্টিয়ায় দুইজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তির মধ্যে খুলনায় ২৪৪২ জন, বাগেরহাটে ১০১ জন, সাতক্ষীরায় ২০৩ জন, যশোরে ১১৫৩ জন, ঝিনাইদহ ৫৪৪ জন, মাগুরায় ২৫২ জন, নড়াইলে ৫৯৪ জন, কুষ্টিয়ায় ৯৩৪ জন. চুয়াড্ঙ্গাায় ১৭৯ জন, মেহেরপুরে ৫৯২ জন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮৭ জন এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০২২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে খুলনা বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন ৩৭২ জন। রেফার্ড করা হয়েছে ১০২ জনকে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button