অবশেষে ময়লাপোতা মোড়-সড়ক সংকুচিত করে নৌকার আদলে করা সৌন্দর্য বন্ধনের কাজ বন্ধ
প্রবাহের সচিত্র প্রতিবেদনে টনক নড়লো কর্তৃপক্ষের
দাবি উঠেছে-পাওয়ার হাউজ মোড় পর্যন্ত চার লেন তৈরির
সরকারি কর্মকর্তাদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মানবেনা নগরবাসী
সব পক্ষের সঙ্গে ‘মুক্ত আলোচনা’র পর সিদ্ধান্তের দাবি
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান : সৌন্দর্য বন্ধনের নামে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ময়লাপোতা মোড়-সড়ক সংকুচিত করে পতিত আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে করা নকশার নির্মাণ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করেছেন কর্তৃপক্ষ। রোববার প্রবাহে এ সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে টনক নড়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের। এরপরই কাজ বন্ধের বিষয়টি দৃশ্যমান হয়। কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা-নগরবাসীসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন এ প্রকল্পের প্রধান। তবে, রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাভোগী কিছু সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তার চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নগরবাসীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি উঠেছে। এদিকে জিরোপয়েন্ট-ময়লাপোতা চারলেন সড়কটি নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড় পর্যন্ত বর্ধিত করারদাবি উঠেছে। যদিও এর আগে ‘শেখ বাড়ি’ রক্ষায় নকশা পরিবর্তন করে চারলেন সড়কটি ময়লাপোতা মোড় পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, কোনভাবেই সড়ক বন্ধ করা যাবে না। নগরবাসীর সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। স্বৈরাচারের দোসর ও আমলাদের চাপিয়ে দেওয়া কোন সিদ্ধান্ত খুলনাবাসী মেনে নেবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করে এ প্রকল্পের পরিচালক ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান বলেন, রোববার (২৪ নভেম্বর) থেকে নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও কেসিসির প্রশাসকের সাথে কথা বলে সম্ভব হলে কেএমপি কমিশনারকে নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে কথিত ফ্যাসিবাদচেতনায় নৌকার আদলে করা নকশায় সৌন্দর্য বন্ধনের নামে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ময়লাপোতা মোড়-সড়ক সংকুচিত করার কাজ শুরু হয়। ফলে যানজট এবং জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করতে শুরু করে সেখানে। সারাক্ষণই লেগে থাকছে যানজট। এ কারণে নকশার পরিবর্তনের দাবিতে নগরীতে ছাত্র-জনতা তীব্র আন্দোলন শুরু করে। নকশা পরিবর্তনের দাবিতে তারা কেসিসি ঘেরাও’র হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার দাবীকে উপেক্ষা করে অতিরিক্ত শ্রমিক লাগিয়ে রাত-দিন তড়িঘড়ি করে দ্রুত এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হন সংশ্লিষ্টরা। অথচ: নগরীর অসংখ্য সড়ক চলাচলের অযোগ্য থাকলেও তা সংস্কারের বিষয়ে কেসিসি কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই। বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর ২২টি স্থানের সৌন্দর্যবর্ধনের নামে সড়ক সংকুচিত করে যানজটের স্থায়ী সংকট তৈরি করতে যাচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন। বিশেষ করে নগরীর ময়লাপোতা মোড়কে এমনভাবে সংকুচিত করা হচ্ছে। যার ফলে রাস্তা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। যাতে সেখান থেকে যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এর ফলে নগরীর কদম তলার কাঁচামালের আড়ত থেকে নিরালা বা গল্লামারীগামী যানবাহনগুলোকে ষাটগম্বুজের পূর্বপাশ দিয়ে যেমন ঘুরে যেতে হবে, তেমনি ইকবাল নগর মসজিদ লেন থেকে রূপসাগামী যানবাহনগুলোকেও ঘুরে আসতে হবে ময়লাপোতা মোড় হয়ে। যেটি আরও একটি জটলা তৈরি করবে বলেও আশংকা অনেকের। অনেক সময় উল্টো পথে যানবাহন চলতে গিয়ে দুর্ঘটনারও আশংকা করছেন নগরবাসী। এজন্য নতুন করে নকশা প্রণয়নসহ যানবাহনের জন্য অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছেন খুলনার নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর ময়লাপোতা মোড়কে সৌন্দর্যম-িত করার নামে পতিত আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক- পুরো একটি নৌকায় পরিণত করা হচ্ছে। মোড়ের ঐতিহ্যবাহী বায়তুল আমান জামে মসজিদ থাকছে নৌকার মাঝখানেই। নৌকার এক মাথায় আগে থেকেই আছে ষাট গম্বুজের রেপ্লিকা। বিপরীত প্রান্তে অন্য কোনো স্থাপনা তৈরির চিন্তা-ভাবনা চলছে। কেসিসি’র অপসারিত মেয়র পলাতক তালুকদার আবদুল খালেকের ক্ষমতাকালে প্রকল্প গ্রহণের সময় মসজিদের সামনের অংশে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপন করার পরিকল্পনা ছিল। যদিও ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর নতুন করে নকশা তৈরি করা হয়। কেসিসির সূত্রটি বলছে, ময়লাপোতা মোড়সহ নগরীর ২২টি মোড়ের সৌন্দর্য বন্ধনের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ২০১৯ সালে। আগামী বছর (২০২৫) জুন পর্যন্ত এর মেয়াদ। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন নামের ওই প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ কোটি টাকা। ময়লাপোতা মোড়ের নামটিও তখন পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু চত্বর দেওয়া হয়। যেটি গত ৭ আগষ্ট পরিবর্তন করে ময়লাপোতা মোড় রাখা হয়। কিন্তু নৌকার আদলের নকশা এবং সড়ক বন্ধের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। এ প্রসঙ্গে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. মোঃ বাবুল হাওলাদার বলেন, জনসাধারনের দুর্ভোগ করে কোন সৌন্দর্য বর্ধন খুলনাবাসী মেনে নিবে না। এজন্য নকশা পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে পাওয়ার হাউজ মোড় পর্যন্ত চার লেন তৈরিরও দাবিও জানান তিনি। নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা খুলনা মহানগর সভাপতি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। তাই দুর্ঘটনা রোধে নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
নকশা পরিবর্তন আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সাংবাদিক এইচ, এম, আলাউদ্দিন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আন্দোলন দেখে রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টা কাজ করে যাওয়া নগরীর ময়লাপোতা মোড়ের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ অবশেষে বন্ধ রাখা হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রবিবার (২৪ নভেম্বর) থেকে কাজ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান। তিনি জানান, রবিবার(২৪ নভেম্বর) এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও কেসিসির প্রশাসকের সাথে কথা বলে সম্ভব হলে কেএমপি কমিশনারকে নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ময়লাপোতা মোড়ের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে রাস্তা সংকুচিত করার প্রতিবাদে নাগরিকদের বৃহস্পতিবার থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন চলে আসছে। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে রবিবারের মধ্যে নকশা পরিবর্তনের আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়, অন্যথায় সোমবার (২৫ নভেম্বর) কেসিসি ঘেরাও করা হবে। এরপর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান কেসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী।