মণিরামপুরে পাঁচ গ্রামে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় বোরো আবাদ অনিশ্চিত

# ব্রীজের মুখ বন্ধ করে মৎস্য ঘের নির্মাণ #
মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ যশোর-চুকনগর মেইন সড়কের ৫টি ব্রীজ-কালভার্টের পানি নিস্কাশনের মুখ ইটের গাথুনি ও লোহার কপাট দিয়ে বন্ধ করে সুলতান মোড়ল নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির রানা মৎস্য খামার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মণিরামপুর উপজেলার টেপুর বিলে অপরিকল্পিতভাবে ১২শ বিঘা জমিতে এই মৎস্য খামার করার কারণে পাঁচ গ্রামের প্রায় ১০হাজার মানুষ প্রতিবছর জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে আসছে। বর্তমানে ব্রীজ-কালভার্টের মুখ বন্ধ থাকায় পানি বের হতে না পারায় এলাকার ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে সোমবার সকালে এলাকার ভুক্তভোগী জনগনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, যশোর-চুকনগর সড়কের পশ্চিম পাশে মণিরামপুর উপজেলায় টেপুর বিল। এই বিলে উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের সুলতান মোড়ল নামে এক ব্যক্তি প্রায় ১২শ বিঘা জমি নিয়ে রানা মৎস্য খামার করেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ,সুলতান মোড়ল মেইন সড়কের ৫টি ব্রীজ-কালভার্টের পানি নিস্কাশনের মুখ ইটের গাথুনী ও লোহার কপাট দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। যার কারণে শ্যামকুড় ইউনিয়নের আমিনপুর, শ্যামকুড়, চিনাটোলা, নাগোরঘোপ ও হাসাডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ১০হাজার মানুষ প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বসতভিটায় ও মাঠের ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের পথ ব্রীজ-কালভার্টের মুখ গুলো বন্ধ থাকায় বিলের পানি নিস্কাশন হয়ে শাতেনতলা ব্রীজের খাল হয়ে হরিহর নদীতে পড়তে পারছে না। শীত মৌসুমে বিল থেকে পানি নিস্কাশিত না হওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। ফলে চলতি বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে তাই স্থানীয় জমির মালিক ও ভুক্তভোগিরা সোমবার জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও সেনা কর্মকর্তা বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী আমিনপুর গ্রামের ফজলুর রহমান ও নাগোরঘোপ গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, মৎস্য খামারের কারণে ব্রীজের মুখ বন্ধ করার ফলে ৫টি গ্রামের পানি বের হতে পারে না। যার জন্য এলাকার বাড়ি-ঘর ও মাঠে জলাবদ্ধতা হয়ে আবাদী জমিতে ফসল হচ্ছে না। রানা মৎস্য ঘের করায় প্রতিবছর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে শীতকালেও জমিতে পানি থাকায় বোরো আবাদ নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।
নাগোরঘোপ এলাকার বাবু ও আলমগীর বলেন, এমনভাবে ঘের কেটেছে তাতে এলাকার পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই। তারপর ব্রীজের মুখ বন্ধের প্রতিবাদ করলে ঘের মালিক এক শ্রেনীর মানুষ দিয়ে মামলা দেয়াসহ খুন-জখমের বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ঘের মালিক সুলতান মোড়ল বলেন, এলাকার জলাবদ্ধতার জন্য আমি একা দায়ী না, পাশে আরও অনেক ঘের রয়েছে। তাদের ঘেরের পর আমার ঘের। আর ব্রীজ-কালভার্টের মুখ বন্ধ করলেও পানি নিস্কাশনের কোন সমস্যা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না বলেন, ব্রীজ-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে এলাকা মানুষের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না। তাছাড়া কৃষি জমি ও মানুষের সর্ম্পদ নষ্ট করে এ ধরনের মাছের ঘের কেউ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।