স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে র‌্যাফেল ড্র নামে জুয়ার টিকিট ঃ নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

আজ ইমাম পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল
# ফুসে উঠছে এলাকাবাসী #

স্টাফ রিপোর্টার ঃ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলনায় ফের চালু হয়েছে র‌্যাফেল ড্র নামের লটারি। গত সোমবার থেকে নগরীতে প্রায় শতাধিক ইজিবাইকে করে ‘দৈনিক সাদিকা র‌্যাফেল ড্র’ নামের এই লটারির টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনলে পুরষ্কার হিসেবে পালসার মডেলের মোটরসাইকেল দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। এতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নি¤œ আয়ের মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, র‌্যাফেল ড্র’কে লটারি বলা হলেও এটি এক ধরনের উন্মুক্ত জুয়া। ইতোমধ্যে খানজাহান আলী থানা ইমাম পরিষদের পক্ষ থেকে এই আয়োজন বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর তৌহদী জনতার ব্যানারে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লি ও মাদ্রাসার ছাত্ররা। কিন্তু এতে বন্ধ না হয়ে আয়োজকদের তৎপরতা আরও বেড়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ নেতারা নেপথ্যে থেকে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাফেল ড্র চালু করতেন। সাধারণ মানুষ প্রতারিত হওয়ায় প্রতিবারই এর বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ হতো। তখন লটারির বন্ধ করে দিতো কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২০২৩ সালে বটিয়াঘাটায় এমন লটারির আয়োজন হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা নগরীর গিলাতলা বালুর মাঠে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী মিনি বাণিজ্য ও আনন্দ মেলা। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্রতি রাতে র‌্যাফেল ড্রয়ের কথা প্রচার করা হচ্ছে। সেখানে সার্কাস ও বিনোদন জোন নামে পৃথক জোন চালু করা হয়েছে। সেলিম খান নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি মেলা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, পুরষ্কারে মটর সাইকেলের কথা প্রচার করে এরা শহর গ্রামেগঞ্জে লাখ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি করছে। রিকসা, ভ্যান চালক, কুলি-মজুর সারাদিন যা আয় করে, সবাই বিকাল থেকে সেখানে লাইন দিয়ে টিকিট কিনছে। এরপর নিঃস্ব হয়ে রাতে বাড়ি ফিরছে। এটা বন্ধ করতে না পারলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তিনি বলেন, আমরা র‌্যাফেল ড্র-বন্ধের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এর সঙ্গে জড়িত। তারা কথা শুনছে না। খানজাহান আলী থানা জামায়াতের সভাপতি সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষকে টার্গেট করে এসব আয়োজন করা হয়েছে। আমরা মুসল্লিদের নিয়ে মিছিল করেছি, স্মারকলিপি দিয়ে এসব আয়োজন বন্ধ করতে বলেছি। তারাও আশ^াস দিয়েছিলেন, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আয়োজক সেলিম খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মেলার স্থানে তিনি ছিলেন না। ফোনও ধরেননি। ২৯ ডিসেম্বর রাতে নগরীর দৌলতপুর থেকে জুয়ার লটারির টিকিট ও লটারির বিক্রির টাকাসহ কামরুল হোসেন এরশাদকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। ওই সময় সে নিজেকে দেয়ানা ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি হিসেবে দাবি করেন। তবে এই নামে ওই ওয়ার্ডে যুবদলের কোন সভাপতি নেই। ওই দিন জুয়ার লটারিসহ আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে তদবিরও করা হয়। পরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। এদিকে মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে হঠাৎ করে নগরীর বিভিন্নস্থানে চুরি ও ছিনতাই বেড়েছে। মেলার অন্তরালে চলছে জুয়ার লটারির টিকিট বিক্রি ও চরকা খেলা। প্রতিদিন খুলনা মহানগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় ২শ’র বেশি ইজিবাইক অসংখ্য পিকআপ ও মটরসাইকেলে করে টিকিট বিক্রি করছে। বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মেলার আয়োজক সেলিম ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। গত কয়েকদিনে খানজাহানআলী থানার মিরেরডাঙ্গা, শিরোমনি, বাইপাস, গিলাতলা, বাদামতলা যোগিপোলসহ বিভিন্নস্থানে চুরি সংঘটিত হয়েছে। খানজাহান আলী থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনায় কেএমপি এলাকায় মাইকিং করে কোন টিকিট বিক্রি করতে পারছে না। দেখা মাত্র আটক করা হচ্ছে। মেলার নামে জুয়াকে পুলিশ কখনই সমর্থন করে না বলে তিনি দাবি করেন। মেলার আয়োজন ও নগরজুড়ে ইজিবাইকে করে টিকিট বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, এটা তো সেনাবাহিনীর এরিয়ায় করছে। তবে নগরী জুড়ে র‌্যাফেল ড্র’র মাইকিং না হয় সে ব্যাপারে প্রতিটি থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরা মেলা করাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে পুলিশের কাছ থেকে কোন ধরণের অনুমতি নেয়নি বলে তিনি জানান। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, এ মেলার ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। তারা অবৈধভাবে এ মেলা পরিাচলনা করছে। এদিকে মেলার নামে মেলার মাঠে জুয়া ও র‌্যাফেল ড্র এর নামে জুয়ার টিকিট বন্ধের দাবিতে ইমাম পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে আজ শুক্রবার দুপুর ৩টায় শিরোমনি মোড়ে। খানজাহানআলী থানা ইমাম পরিষদ এ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button