২০ লাখ টাকার চুক্তিতে কক্সবাজারে খুন হয় টিপু!

# কিলিং মিশনে ছিলো ৫-৭ জন
কামরুল হোসেন মনি ঃ গত ৯ জানুয়ারি ২০ লাখ টাকার চুক্তিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সি-গাল পয়েন্টে গোলাম রব্বানী টিপুকে খুন করেন খুনিরা। খুনের আগে দেয়া হয় ১৫ লাখ টাকা। খুন হওয়ার পর দেওয়া হবে বাকি ৫ লাখ। এই মিশন সফল করতে বিধবা নারীকে টোপ হিসেবে ব্যহার করা হয়। হত্যার মিশনে ছিলেন ৫-৭ জনের মতো। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ হত্যাকা-ে ১৪ জানুয়ারি মৌলভীবাজার থেকে খুলনার দেওয়ান মেল্লাপাড়ার মো: সেলিম আকন্দের মেয়ে ঋতু (২৪), একই এলাকার জামাল শেখের ছেলে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭) ও মধ্য কারিগর পাড়ার মো: হায়দার সরদার অদুদের ছেলে গোলাম রসুল (২৫)কে কক্সবাজার পুলিশ। পরে প্রেসবিফ্রিং কক্সবাজার রহমত উল্লাহ দাবী করেন, হুজি শহীদ হত্যার প্রতিশোধ নিতেই তার ভাতিজা শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু গুলি করে হত্যা করেন টিপুকে। এ হত্যাকা-ে ঋতু নামের ২৪ বছর বয়সী এক নারীকেও ‘ফাঁদ’ হিসেবে ব্যহার করা হয়েছিল।
একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০ লাখ টাকার চুক্তিতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের অপসারিত ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি গোলাম রব্বানী টিপুকে খুন করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ্ওই দিন টিপু খুন করার জন্য কক্সবাজারে ছিলো ৫-৭ জন কিলার। এর মধ্যে নিহত হুজি শহীদের ভাতিজা শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু, গোলাম রসুল, অ্যালকো রিপন, পাটু ওরফে ইমরান সহ আরো কয়েকজন। যশোরে পাটু হিসেবে খুলনায় ইমরান হিসেবে পরিচিত। এরা সবাই সন্ত্রাসী। ভাড়াটে কিলার। এই হত্যা মিশন সফল করতে ২০ লাখ টাকায় চুক্তি হয় কিলারদের সাথে। হত্যার আগে কিলারদের দেওয়া হয় ১৫ লাখ টাকা। হত্যার শেষে বাকি ৫ লাখ টাকা পাবে। এই হত্যাকা-ে অর্থযোগাদাতা ছিলেন খুলনার সাবেক এক কাউন্সিলর। যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকরা হচ্ছে ওই সূত্রটি জানায়। যেদিন কক্সাবাজারে টিপু কে হত্যা করা হয়। সেদিন খুলনার আরও কয়েকজন কাউন্সিলর কক্সবাজারে বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছিলেন। টিপুর খুন হওয়ার পর তারা ওখান থেকে আত্মগোপনে চলে যান।
কাউন্সিলরের সঙ্গী কে এই ঋতু : দৌলতপুর দেয়ানা এলাকার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইমরান ওরফে রকির সাবেক স্ত্রী ছিলো এই ঋতু। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই খুলনায় র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ইমরান ওরফে রকি নিহত হয়। ওই সময় র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত রকি দৌলতপুর থানার দেয়ানা এলাকার তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শেখ মিজানুর রহমান ওরফে হাতকাটা মিজার ছেলে। রকিও মাদক ব্যবসায়ী ও ৬-৭টি মামলার আসামি ছিলো। ওই ঋতুকে আবার খুলনায় সিমু নামে অনেকেই চেনেন। সে একক সময় একেক নাম ব্যবহার করতো। কক্সবাজারে হোটেল গোল্ডেন হিলের হোটেল গোল্ডেন হিলের ‘অতিথি লিপিবদ্ধ বই’-এ উল্লেখ করা নিহত গোলাম রব্বানী টিপুর সঙ্গে রেমি (২৭) নামের পরিচয় দিয়েই বুকিং করেন। খুলনার দেওয়ান মেল্লাপাড়ার মো: সেলিম আকন্দের মেয়ে এই ঋতু ওখানে পরিচয় দেন রেমি হিসেবে।
গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি খুলনার নেতা ছিলেন হুজি শহীদ। ২০১৫ সালে হুজি শহীদ হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন কাউন্সিলর টিপু এবং এ হত্যা মামলায় চার আসামির মধ্যে আরও এক আসামি ২০২২ সালের ৩০ জুন নগরীর মুজগুন্নী এলাকায় জুলকার নাঈম মুন্নাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর হুজি শহীদের ভাতিজা হলেন পুলিশের হাতে আটক শেখ শাহরিয়ার পাপ্পু। সেখান থেকেই শত্রুতা ও ক্ষোভ তৈরি হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন ও আন্ডারওয়ার্ল্ড-এর সম্পৃক্ততা এ তিনটি কারণে কাউন্সিলর টিপু হত্যা হতে পারে বলে মনে করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়টি যেমন খতিয়ে দেখা হচ্ছে তেমনি স্থানীয় অপর এক চরমপন্থি নেতার নামও উল্লেখ করেছেন টিপুর স্ত্রী। সেটিও কতটা সঠিক সেটিও পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কে এই হুজি শহীদ : ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও পাটশ্রমিক ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত শহীদ খুলনার দৌলতপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) কর্মচারী আকুঞ্জি মাসুদ আলম, মাইটিভির খুলনা প্রতিনিধি হাসানসহ একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। এলাকায় তিনি হুজি শহীদ নামে পরিচিত।
স্থানীয় লোকজন জানান, ছাত্রজীবনে টিপু ছাত্র মৈত্রীর রাজনীতি করতেন। পরে চরমপন্থি দলে সম্পৃক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যোগ দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগে। ২০২৩ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হারেন। ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর দৌলতপুরে খুন হন নিষিদ্ধ সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি নেতা শেখ শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ। ওই হত্যা মামলায় টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। টিপুর পরিবার আগে থেকেই দাবি করেন খুলনার শত্রুরাই টিপুকে কৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করেছে।