নিরাপদ খুলনা গড়ার প্রত্যয়ে কেএমপির একগুচ্ছ কর্ম পরিকল্পনা : পুলিশ কমিশনার

স্টাফ রিপোর্টার ঃ আইন-শৃংখলার উন্নয়ন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সর্বপরি নিরাপদ খুলনা গড়ার প্রত্যয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। রোববার সকাল ১১ টায় কেএমপির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং-এ কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার এ পরিকল্পনার কথা জানান।
সঙ্গে সঙ্গে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ ১৭টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। একইভাবে পাঁচটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে নগরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গেল ৫ আগস্ট পরবর্তী বিগত চার মাসের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে এ চিত্র উপস্থাপন করেন পুলিশ কমিশনার মো: জুলফিকার আলী হায়দার। উপস্থাপন করেন বিগত সাড়ে চার মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পুলিশের তৎপরতার চিত্রও। এসব চিত্র তুলে ধরে গতকাল রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে কেএমপি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “গেল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর সারাদেশের ন্যায় খুলনা মহানগরীতেও পুলিশিং ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশিং ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল ও কার্যকর করানোর লক্ষ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কর্তৃপক্ষ নানামুখী পদক্ষেপ নেয়।”
নিরাপদ শহর গঠনে তিনি নিম্নরূপ চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করেন। যথাক্রমে পুলিশ সদস্যদের সক্রিয়তা ও পেশাদারিত্বে ঘাটতি, নাগরিকদের আইন মান্যতায় ঘাটতি, মহানগরীর বেশ কিছু রস্তার বেহাল দশা, শহর জুড়ে ড্রেন নির্মাণ কার্যক্রমের কারণে রাস্তা কাটাকাটি ও ব্যবহারযোগ্য রাস্তাা সরু হয়ে যাওয়া, ইন্ডাস্ট্রি কম থাকায় বেকার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, মাদকাসক্তি ও মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা, মাদক কারবারি ও অবৈধ দখলদারিত্ব নিয়ে প্রভাব বিস্তাারের চেষ্টা, সন্তান মানুষ করার বিষয়ে পিতামাতাদের গাফিলতি ও স্পোর্টস এবং অন্যান্য ইতিবাচক কর্মকা- কম থাকা।
পুলিশ সদস্যদের মনোবল ও কর্মউদ্দীপনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপসমূহ। যথাক্রমে থানা, ফাঁড়ি এবং ক্যাম্প ভিজিট করে পুলিশ সদস্যদের সাথে মতবিনিময়, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার আয়োজন, কেএমপি’র সকল ইউনিটে পিঠা উৎসবের আয়োজন, পুলিশ লাইন্সের পুকুর হতে মৎস্য আহরণ করে অর্ধেক মূল্যে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বিতরণ ও পেশাগত কাজে উৎকর্ষতা প্রদর্শনের জন্য নগদ অর্থ পুরস্কার ও সার্টিফিকেট প্রদান।
প্রেস ব্রিফিং-এ কেএমপির চলমান অভিযানের সফলতা তুলে ধরা হয়। অপরাধ কমাতে নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিতে সকল পেশার মানুষদের সাথে মত -বিনিময়, বিভিন্ন মোড়ে যৌথ চেকপোস্ট স্থাপন, ক্রাইম স্পটগুলোতে বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান, ১২জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারে পুরস্কার ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি বিগত সাড়ে ৪ মাসে ১০ হাজার ৬৬০ পিস ইয়াবা, ৯৪ কেজি গাজা, ৯৫৮ বোতল ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ২১৩টি মাদকের মামলা এবং ২৪৪ জন মাদককারবারী গ্রেপতার করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা মহানগরীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর আজিম, রিয়াজুল, হাড্ডি সাগর, রকি, ডাবলু এবং দুর্ধষ ছিনতাইকারী স্বাধীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৭৬ রাউন্ডগুলি, ৬টি বোমা সদৃশ্য বস্ত এবং বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়া চোরাচালানকালে কেএমপি পুলিশ স্বর্ণেও বার এবং অলংকার লুন্ঠিত হওয়া ১৮৮ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া চুড়ি-ছিনতাই হওয়া ১৫টি মোটরসাইকেল ও ১৫টি ইজিবাইক উদ্ধার করেন। কেএমপি’র ৮ থানা এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যৌথভাবে ১৩৩ জন নারী ও শিশু ভিকটিম উদ্ধার করে অভিাবকের জিম্মায় প্রদান করেন। ক্রাইমডিভিশন পাশাপাশি ট্রাফিক ডিভিশন সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানজট নিরসনে সচেতনতা পাশাপাশি ১ হাজার ১৫৬টি যানবাহন আটক করেছে। বিভিন্ন অপরাধে ৪ হাজার ১৮১টি যানবাহন আইনে মামলা দেওয়া হয়।
কেএমপি কমিশনার মো: জুলফিকার আলী হায়দার উল্লেখ করেনর, খুলনা গড়ার লক্ষ্যে ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- ‘এ্যাওয়ারনেস কার্ড’ বিতরণ। এ কার্ডের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিক নিজের থেকেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে সজাগ থাকবে। এছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনে নাগরিকদের উৎসাহিত করা, ইজিবাইক চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্থাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে মিনি ম্যারাথন রেস/দ্রুত হাটা প্রতিযোগিতা এবং শিশু কিশোরদের সাথে পুলিশের সম্পর্ক উন্নয়নে ২১ ফেব্রুয়ারি হাতের লেখা প্রতিযোগীতা আয়োজন করা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু সালেহ মো: রায়হান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো: কুতুবউদ্দিন ও ডিসি সাউথ মো: মনিরুজ্জামান মিঠু।