খুলনায় এক তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে আলোচিত লেডি বাইকার এশা গ্রেফতার

# এশা চক্রের টার্গেট ছিল প্রভাবশালীর মেয়ে-স্ত্রী #
# ভিকটিমের বাবার মামলা দায়ের, আসামীকে আদালতে সোর্পদ #
# গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে একাধীক সমকামীতার অভিযোগ রয়েছে #
স্টাফ রিপোর্টার : খুলনার লেডি বাইকার ইরিন জাহান এশা ও তার চক্রের টার্গেট ছিল প্রভাবশালীর মেয়ে বা স্ত্রী। তাদেরকে টার্গেট করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে নিজ আয়ত্বে নিয়ে এসে পরিবারের কাছে বড় অংকের মুক্তিপণ দাবি করাই ছিল এই চক্রের কাজ। পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। খুলনায় এক তরুণীকে নির্যাতনের অভিযোগে লেডি বাইকার এশাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাকৃত আসামী ইরিন জাহান এশা দৌলতপুর থানাধীন পাবলা কেশবলাল রোড এলাকার বাসিন্দা মৃত: ইসমাইলের মেয়ে। ওই ঘটনায় রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে মুজগুন্নি এলাকার বাসিন্দা ভিকটিমের বাবা মো. জাহিদ হোসেন বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। একইদিন দুপুরে আসামী এশাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান। তিনি জানান, এশা এক তরুণীকে বিভিন্ন সময়ে মাদকসেবন করাতেন। বাদীর মেয়ে অতিরিক্ত নেশাদ্রব্য সেবন করে তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করে। এমনকি মাদক সেবন করতে না পারলে সে বিভিন্ন সময় বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করতো মেয়েটি।এ ঘটনায় বাদী নিরুপায় হয়ে শনিবার (২২ মার্চ) দিবাগত রাত অনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় মেয়েকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করার উদ্দেশে বাড়ি থেকে রওনা হয় পরিবার। বাড়ির সামনে লেডি বাইকার এশাসহ অন্যান্য আসামিরা মোটরসাইকেলে এসে তাদেরকে অনুসরণ করতে থাকে। রাত সোয়া ১২টার দিকে বাংলাদেশ বেতার ভবনের সামনে পৌঁছালে আসামিরা মোটরসাইকেলযোগে বাদীর অ্যাম্বুলেন্সের সামনে এসে গতিরোধ করে। অ্যাম্বুলেন্স থামার পর জোরপূর্বক অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে প্রবেশ করে বাদীর মেয়ের হাত ও কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করে তাকে নেওয়ার চেষ্টা করে। আসামিদের সাথে ধস্তাধস্তি করতে করতে আসামি ইরিন জাহান এশা শেখ ও তার ভাই মো. খালিদ হাসান অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার টান দিয়ে শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছায়। শিববাড়ি পৌছানোর পর বাদীর ডাক-চিৎকার শুনে সেখানে দায়িত্বরত নৌ-বাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে এসে আসামিদের ও বাদী এবং তার মেয়েকে হেফাজতে নেয়। এরপর নৌ-বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার বিষয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। নৌ-বাহিনীর সদস্যরা আসামিদের থানা পুলিশের নিকট হস্তাস্তর করে এবং বাদীর মেয়েকে বাদীর নিকট বুঝিয়ে দেয়। আসামিদের নিকট থেকে তরুণীকে উদ্ধারের সময় ধস্তাধস্তিতে ওই তরুণী সামান্য আঘাত পেলে বাদী তাকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সময় ওই মেয়ের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করলে লেডি বাইকার ইরিন জাহান এশা শেখ বাদীকে ভয়ভীতি দেখাতো ও হুমকি দিতো। এ বিষয়ে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বরপূর্ণ তথ্য পেয়েছে, যা যাচাই-বাছাই চলছে। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে আসামিরা প্রফেশনালভাবে প্রভাবশালীর মেয়ে বা স্ত্রীকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে মাদক সেবনসহ অনৈতিক কাজের সাথে লিপ্ত করে এবং ভিকটিমদের নিজ আয়ত্বে নিয়ে এসে পরিবারের কাছে বড় অংকের মুক্তিপণ দাবি করে।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের বড় ভাই সাবিদ হোসেন জানান, এশা একাধিক মেয়েদের সাথে সমকামীতায় জড়িত ছিল। সম্প্রতি সে একটি মেয়ের সংসারও ভেঙে দেয়, এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সে আমার বোনকে তার আসক্তিতে জড়িয়ে ফেলে। আমার বোনও তার প্রতি আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে। এশা বিভিন্ন সময়ে আমার বোনকে মাদকদ্রব্য সেবন করাতো। এভাবে সে আমার বোনের পিছে সারাক্ষন পড়ে থাকে। এশার সঙ্গ ত্যাগ করাতে আমরা বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শনিবার (২২ মার্চ) দিবাগত রাতে আমার বোন অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাকে বাড়ী হতে অ্যাম্বুল্যান্সযোগে খুমেক হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বের হলে, পথিমধ্যে খুলনা শিববাড়ী মোড় এলাকায় এশাসহ কয়েকজন অ্যাম্বুল্যান্স গতিরোধ করে এবং অশভোনীয় আচরণ শুরু করে। পরবর্তীতে সেখানকার ছাত্র-জনতা আমার বোনকে উদ্ধার করে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে গিয়েও সে একই ধরনের আচরন করে। পরবর্তীতে হাসপাতাল সংলগ্ন হতে প্রশাসনের লোকজন তাকে গ্রেফতার করেন। ওই ঘটনায় আমার বোন হাতে ও গলায় চরমভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে হাসপাতাল হতে বোনকে অ্যাম্বুল্যান্সযোগে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, ওই ঘটনায় বাবা বাদী হয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।