একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত চালু করার দাবিতে কুয়েট শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন

# ৩৭ শিক্ষার্থীকে শোকজ #
স্টাফ রিপোর্টার ঃ শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার বিচারের মাধ্যমে দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রমে চালুর দাবিতে খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার বেলা পৌনে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বক্তৃতায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নিকট কুয়েটের সকল ক্লাস পরীক্ষা, সকল একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত চালু করে দেওয়ার জোর দাবি জানান।মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে আমাদের সকল একাডেমিক কার্যক্রম অচল হয়ে রয়েছে। আমাদের সকল কিছু স্থবির হয়ে রয়েছে। আমরা স্থবিরতার বিপক্ষে। আমরা চাই সকল একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত চালু হোক, ক্লাস পরীক্ষা চালু হোক এবং আমরা দ্রুত কুয়েট ক্যাম্পাস থেকে সকল কিছু সম্পন্ন করে বের হয়ে যেতে চাই। স্যারদের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করি, ছাত্রদের উপর যে জুলুম করা হয়েছে সেটার বিচার করা হোক, যারা এই নাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত আমরা চাই তাদের বিচারক হোক এবং আমরা শিক্ষক লাঞ্ছনারও বিচার চাই। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের ছাত্র ভাইদের উপর যারা জুলুম করেছে, যারা এই ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কুয়েট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যে সকল শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন সেটারও বিচার কামনা করছি। মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মুশফিক, আইইএম বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাগর, এমএসই বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিমেল, ইইই বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাবমান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম ও সিইসি বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিক। এদিকে কুয়েট শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করা ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সোমবার শোকজ করেছে কুয়েট কর্তৃপক্ষ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েট সিন্ডিকেটের সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদেরকে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করাসহ সাতটি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, নোটিশ দেওয়া শিক্ষার্থীদেরকে আগামী ১৫ মে বিকেল ৫টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এদিকে একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার ষষ্ঠ দিনেও ক্লাসে যাননি কুয়েটের শিক্ষকরা। শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন তারা। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে শাস্তি কার্যকর করা না হলে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন থেকেও বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকরা। কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের দাবি পূরণ হলে তারা সাধারণ সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। নোটিশ পাওয়ার পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, যে ৩৭ জনকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে তার প্রথম ৭ জন ছাত্রদলের নেতাকর্মী, বাকিরা সাধারণ শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। তারা শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। এর পর থেকেই ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক মো. হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।