জাতীয় সংবাদ

আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে দিল্লি যাচ্ছি না: পররাষ্ট্র সচিব

প্রবাহ রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে দিল্লি সফরে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ পরামর্শক সভার সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সম্পর্ক বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে ভারত যাচ্ছেন কি না-জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আপনারা মেলাতে পারেন। সাধারণত গত এক বছরে আমাদের অগ্রগতি আছে। সেগুলোর একটা টেকিং টকস এবং নির্বাচনের পরে বা আগামী বছরে আমরা কোন কোন জায়গায় আরও বেশি দৃশ্যত জোর দিতে পারি; যাতে সময় নষ্ট না হয়, বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমি মনে করি না অপ্রয়োজনীয় অন্য কোনো হিডেন এজেন্ডা আছে। যেহেতু নির্বাচন আছে, তাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো জানার থাকে, সেটা তাদের অবহিত করতে পারব। আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে আলাদা কোনো বার্তা নিয়ে যাচ্ছি না। চলতি বছরে দুইবার এফওসি (পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক) করার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে পররাষ্ট্রসচিব জানান, পর্যালোচনা করার জন্য যেতেই পারি। একাধিক বার হবে না এফওসি, এমন কোথাও বলা নাই। বছরের প্রথমে হয়েছে, এখন আবার বছরের শেষে হচ্ছে। এরমধ্যে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে। মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, এটা একটা রুটিন মেকানিজম। সেখানে দুই দেশের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। ভারতের সঙ্গে আমাদের এ বৈঠকে অগ্রাধিকার যেসব বিষয় আছে-রাজনীতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, কানেক্টভিটি, জ¦ালানি, বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সংক্রান্ত, আঞ্চলিক, উপআঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন সহায়তা, কনস্যুলার সংক্রান্ত সহযোতিার বিষয় থাকবে। এর বাইরেও আলোচনা হতে পারে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটির গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, কানেক্টিভিটিতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। এখন কিন্তু অনেকটা শেইপের মধ্যে এসে গেছে। নর্থ ইন্ডিয়া, মাতারবাড়ি আছে জাপানের সম্পৃক্ততায়। ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের আগ্রহ আছে, আমেরিকার আছে। আমরা কী কী ধরনের প্রজেক্ট নিতে পারি সেখানে আমরা আমাদের আউটলুকস বলেছি, সেটা নিয়েও আলোচনা করার সুযোগ আছে। আলোচনায় আরও কী কী থাকতে পারে তুলে ধরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, গ্লোবালের স্বার্থ সংরক্ষণে কীভাবে আমরা কাজ করতে পারি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে কীভাবে আমরা একে অপরকে সহযোগিতা বাড়াতে পারি, সে বিষয়গুলো এখানে আলোচিত হবে। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কী ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও তাদের আপডেট দেব। কারণ, আমরা সব সময় তাদের সহযোগিতা চেয়ে এসেছি। এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ওদের নির্বাচন আছে সামনে। আমাদেরও নির্বাচন আছে। নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটা তো খুবই বহুপাক্ষিক সম্পর্ক; ট্রেড আছে, বিনিয়োগ আছে, পিপল টু পিপল কনটাক্ট আছে, ভিসা ইস্যু আছে-এগুলো যাতে নির্বাচনের পরও স্মুথলি চলতে পারে। এ সফরকে রাজনৈতিক সফর বলা যায় কি না-জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, রাজনৈতিক ব্যাখ্যা কীভাবে দেবেন আমি জানি না। আমি মনে করি যে, নিয়মিত যে মিটিং হয়, এটাও সেভাবে হবে। এটা ঠিক যে, সামনে আমাদের নির্বাচন আছে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক; আমাদের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং যোগাযোগ-এগুলো তো অপরিবর্তনীয়। এখানের সঙ্গে সরকারের পরিবর্তনের সম্পর্ক আমি দেখি না। পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি ইস্যুতে আলোচনা হবে কি না-জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সাধারণত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তৃতীয় দেশের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। যদি ইনফরমালি আলোচনা ওনারা তোলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু তৃতীয় দেশ নিয়ে সাধারণত আলোচনা হয় না। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের সম্ভবনা বিষয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এটা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। শুক্রবার দিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। সভায় ঢাকার পক্ষে মাসুদ বিন মোমেন এবং দিল্লির পক্ষে বিনয় মোহন কোয়াত্রা যার যার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন।
এদিকে গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা ন্যাশনাল টাস্কফোর্সের সঙ্গে বৈঠকের পরে সভার সভাপতি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মিয়ানমারে বিদ্যমান পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখছে বাংলাদেশ। রাখাইনে অস্থির পরিবেশের কারণে বাংলাদেশে যেন কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে সতর্ক পাহারা দিচ্ছে বিজিবি। এ ছাড়া বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা যেন কোনোভাবেই আসন্ন নির্বাচনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে না পারে, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে সরকার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৩ নভেম্বর থেকে আমরা রাখাইনে কিছু নিরাপত্তা সমস্যার খবর পাচ্ছি। সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলির শব্দ বা মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে শুধু রোহিঙ্গা নয়, অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোক- যারা হয়তো এই গোলাগুলিতে বা এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করছে। তারাও বিক্ষিপ্তভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে, বা চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের বিজিবি সতর্ক অবস্থায় আছে। তারাও এ ধরনের কোনো অনুপ্রবেশ যেন না হয়, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে এবং রাখবে বলে তিনি জানান। এ মুহূর্তে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা জানি যে, রাখাইন প্রদেশে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর একটি সমঝোতা আছে, ফলে সেখানে যুদ্ধ বিরতি ছিল। কিন্তু যে কারণেই হোক, ছোটখাটো কিছু দুর্ঘটনা হয়েছে, যেটি আগে ছিল না। নির্বাচনের সময় রোহিঙ্গাদের ভিন্ন কাজে ব্যবহারের কোনো আশঙ্কা আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই নজর রাখছি এবং এটাও নজর রাখছি যে- সেখানকার কেউ বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে আরও কোনো ধরনের সুযোগ যেন না নিতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে যে গ্রুপ আছে, সেগুলো কোনো আদর্শভিত্তিক নয় জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এগুলোর বেশিরভাগই চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে। ক্যাম্পের ভেতরে আমাদের এপিবিএনের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান। প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, সেটি আমরা জারি রেখেছি এবং রাখবো জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আশা আছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে, তাহলে দ্রুতই যেন প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারি। আমাদের প্রস্তুতির যেন কোনো ঘাটতি না থাকে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button