অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতের মিছিল
প্রবাহ রিপোর্ট : সরকারের পদত্যাগ ও ‘একতরফা’ তফসিল বাতিলের দাবিতে পৃথকভাবে মিছিল করেছে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা। এরমধ্যে বৃস্পতিবার সকালে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও মতিঝিলে নটরডেম কলেজের সড়কে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ করছে। জনগণ এ কর্মসূচিতে রাজপথে নেমে এসেছে। প্রতিদিনই পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালাচ্ছে, নেতা-কর্মীদের না পেয়ে তাদের বাবা-ভাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অবরোধ রুখতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট এসব করে এবার সরকার পার পাবে না। জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে দমানো যাবে না। সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে এবং তাদের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। এর বাইরে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এসময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলসহ ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মিছিলকারীরা ‘এক তরফা তফসিল মানি না, মানব না’, ‘অবরোধ চলছে, অবরোধ চলবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। এদিকে নটরডেম কলেজের সামনে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল করেন জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী। ১৫/১৬ জন নেতা-কর্মী নিয়ে তারা মিছিল করে তফসিল বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেয়। এছাড়া পান্থপথে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান এবং মেরুল বাড্ডায় ছাত্র দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ধোপখোলার কাঠের পোলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল করে নেতাকর্মীরা। সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবি ও নির্বাচন কমিশনের ‘এক তরফা’ তফসিল বাতিলের দাবিতে বিএনপির এটি ষষ্ঠ দফা অবরোধ কর্মসূচি। গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনের মহাসমাবেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর অভিযান চালায় পুলিশ। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অনেক নেতৃবৃন্দকে। গ্রেপ্তার-দমনপীড়নের প্রতিবাদে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এ পর্যন্ত অবরোধের পাশাপাশি তারা দুই দফা হরতালও করেছে। ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘন্টার এ অবরোধে শেষ হবে শুক্রবার সকাল ৬টায়। এদিকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আগের মতোই তালাবদ্ধ এবং কার্যালয়ের দুই পাশে পুলিশি পাহারা রয়েছে।
জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল: ষষ্ট দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মিছিল ও রেললাইন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার দলটির নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এরমধ্যে ডেমরায় সড়ক অবরোধ করে জামায়াতে ইসলামি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খানের নেতৃত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম, ডি আলী, মো. হেলাল উদদীন, আবুল বাসার, এম দেলোয়ার হোসেন, আবু সায়েম, জসিম উদদীন ও ছাত্র শিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতা সৌরভ ও সহিদুলসহ জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। অপরদিকে অবরোধের সমর্থনে শনির আখড়ায় সড়ক অবরোধ করে দলটির নেতাকর্মীরা। এ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ড. মোবারক হোসাইনের নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া সূত্রাপুর এলাকায় মিছিলে নেতৃত্ব দেন জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামরুল আহসান হাসান। অপরদিকে খিলগাঁও ও বনশ্রী এলাকায় প্রধান সড়ক অবরোধ করেন জামায়াতে ইসলামি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য মো. আবদুর রহমানের নেতৃত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শূরা সদস্য আব্দুল্লাহ আল আমিন, মহানগরী মজলিশে শূরা সদস্য আসিফ আদনান প্রমুখ। এ ছাড়া মতিঝিল, হাজারীবাগ, বংশাল, কালসী মোড়, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর-১৩ নম্বর ও মোহাম্মদপুরে সড়ক অবরোধ তরে বিক্ষোভ করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মু. আবদুল মান্নান বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একতরফা পাতানো নির্বাচন এদেশের জনগণ মানবে না। এ সরকার জনগণের হৃদয় থেকে ছিটকে গিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যেতে চায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশের মানুষের আজ বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান বলেন, বীর জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসে সরকারকে লালকার্ড দেখিয়েছে। তারা এই সরকারের পতন এবং কেয়ারটেকার সরকারের গণদাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মিছিল: আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, গণবিরোধী তফসিল বাতিল ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ পালনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক থেকে শুরু করে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত এই মিছিল করে দল দুটি। বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি নির্বাচন নিয়ে মহা নাটক শুরু করেছে। শেখ হাসিনা সরকার দেশের ১৮ কোটি জনগণের কাছে ধরা পড়ে গেছে। দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এ দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেই হবে। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মহাসচিব মো. আবদুল কাদের, গণফোরাম তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ মধু প্রমুখ।