গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২০ : আল-শিফার পরিচালক গ্রেপ্তার
যুদ্ধ বিরতির কথা যখন চুড়ান্ত তখনও হামলা বন্ধ হয়নি

আজ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ৪ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার # আগেরদিনও একই পরিবারের অর্ধশতাধিক নারী শিশু নিহত হয়েছে
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ যখন সর্বত্র হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বিরতি চুড়ান্তর সংবাদ ছড়িয়ে গিয়েছে তখনও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২০ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) উপত্যকাটির খান ইউনিস এবং নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে চালানো পৃথক হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটেছে। হামলায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। এছাড়া আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা উপত্যকায় বসতি ও বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি অভিযানের ধারাবাহিকতায় আরও কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে পাঁচটি বাড়ি লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত এবং আরও কয়েকজন নিখোঁজ হয়েছেন।
এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে আরও দুটি বাড়ি এবং একটি অ্যাপার্টমেন্ট লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় অনেক হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আল জাজিরা বলছে, গাজার মধ্যাঞ্চলীয় এই শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ওই পাঁচজন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। গত কয়েক দিনের মধ্যে এই শরণার্থী শিবিরে এটি নিয়ে দ্বিতীয় দফায় হামলা হলো। এর আগে গত বুধবার ইসরায়েলি হামলায় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এদিকে গাজার বৃহত্তম চিকিৎসাকেন্দ্র আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালককে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। আল-শিফা হাসপাতালের একজন ডাক্তার এএফপিকে বলেছেন, হাসপাতালের পরিচালকসহ আরও কয়েকজন চিকিৎসা কর্মীকে ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান খালিদ আবু সামরা বলেন, ‘ডাক্তার মোহাম্মদ আবু সালমিয়াকে আরও কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসকের সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া ইসরায়েলের এই বিমান হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল ও বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনি সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ১৪ হাজার ৫৩২ জনে পৌঁছেছে। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই ৬ হাজারের বেশি। এছাড়া হামলায় নিহতদের মধ্যে চার হাজারেরও বেশি নারী রয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। অপরদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী কাতার ঘোষণা করেছে, শুক্রবার সকাল থেকে গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। জিম্মিদের প্রথম দলটি বিকালে মুক্তি পাবে ঃ কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেসব জিম্মি একই পরিবারের, তাদের একই একত্রিত করা হবে। স্পষ্টতই প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বেসামরিক নাগরিক অন্তর্ভুক্ত। চার দিনের মধ্যে মোট ৫০ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে। আল-আনসারি বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে কোন পথে বন্দীদের গাজা থেকে বের করে আনা হবে সে বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারবেন না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে আমাদের মূল লক্ষ্য জিম্মিদের নিরাপত্তা। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত একই পরিবারের অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় একই পরিবারের অর্ধশতাধিক সদস্য নিহত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বুধবার এই ঘটনা ঘটে। হামলায় বহু হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে। গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি জানিয়েছেন, বুধবার সকালে গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলার ঘটনায় নিহত ৫২ জন একই পরিবারের সদস্য। তিনি বলেন, জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে কাদুরা পরিবারের ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমার কাছে নিহতদের নামের তালিকা রয়েছে। ওই পরিবারের দাদা থেকে শুরু করে তাদের নাতি-নাতনি সবাই নিহত হয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স