গাজা থেকে এক চতুর্থাংশ সৈন্য প্রত্যাহার ইসরায়েলের

আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারেও একা হয়ে পড়েছে তারা, ফিলিস্তিনের সমর্থন বাড়ছে
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধরত ইসরায়েলের চার ডিভিশনের মধ্যে এক ডিভিশনের সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল সোমবার (১৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৩৬ নং ডিভিশনের সেনাদের ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এরফলে গাজায় যুদ্ধ করার জন্য তিনটি ডিভিশন রয়ে গেছে। ৩৬ নং ডিভিশনে কত সেনা রয়েছে সে বিষয়টি উল্লেখ করেনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক সেনা গাজা থেকে বের গেছেন বা বের হয়ে যাচ্ছেন। সাধারণত একটি ডিভিশনে ১০ থেকে ১৫ হাজার সেনা থাকেন। ডিভিশনের নেতৃত্বে থাকেন একজন মেজর জেনারেল। এই ডিভিশনের সেনাদের বিশ্রামের জন্য কিছুদিন সময় দেওয়া হবে। এরপর তারা আবার প্রশিক্ষণে যোগ দেবেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে তাদের পুনরায় কোথায় মোতায়েন করা হবে। গত দুই মাস ধরে দখলদার ইসরায়েলের ৩৬ নং ডিভিশন গাজার উত্তরাঞ্চলে বর্বরতা চালিয়েছে। তাদের দাবি, এই ডিভিশনের সেনারা উত্তরাঞ্চলে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করেছে। যদিও ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার এক সদস্য জানিয়েছেন, হামাসকে নির্মূল করা থেকে অনেক দূরে রয়েছেন তারা। গাজার উত্তরাঞ্চলে ৩৯ নং ডিভিশন ছাড়াও ১৬২ নং ডিভিশনও যুদ্ধ করেছে। এখন এই ডিভিশনের সেনারা উত্তরাঞ্চলে কথিত ক্লিনআপ অপারেশন চালাবে। এছাড়া হামাসের অবকাঠামো খুঁজে বের করা এবং সেগুলো ধ্বংস করা ও হামাসের যোদ্ধাদের খুঁজে বের করে হত্যা অথবা আটক করবে তারা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৯৯ নং ডিভিশন গাজার মধ্যাঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে রয়েছে ৯৮ নং ডিভিশন। অপরদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে আগে থেকেই বিশ্ব দরবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ইসরায়েল। এবার সেই আলাপে নতুন মাত্রা যোগ করেছে আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচার আদালত। এখানে ইসরায়েলের বিপক্ষে মূল অভিযোগ তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইসরায়েলও লড়ছে পাপ আড়াল করতে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে বিচারিক প্রক্রিয়া। আইসিজে বিচারগৃহে দু-পক্ষেই লড়বেন নামকরা সব আইনজীবী ও আইনবিশারদরা। দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় এই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুরু হচ্ছে। আইসিজে আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৮৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র উপস্থাপন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। গত অক্টোবর থেকে এই গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে দখলদার দেশটি। তাছাড়াও গাজার ২০ লাখ মানুষের জন্য পানি, খাবার ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহের পথ বন্ধ করে রেখেছে নেতানিয়াহুর দেশ। জ্বালানি, আশ্রয় এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তাও পৌঁছানো যাচ্ছে না সেখানে। গাজায় আগ্রাসনে ইসরায়েল এগিয়ে থাকলেও আন্তর্জাতিক আদালত ও আইনে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। আরো অনেক দেশ দেশটির পক্ষে থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা শীর্ষ মানের আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের নিয়ে একটি দল গঠন করেছে। এই আইনজীবী দলকে স্বাগত জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। এই আইনজীবী দলের নেতৃত্বে থাকবেন জন ডুগার্ড। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখ-ে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ দূত তিনি। জন ডুগার্ড দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত। ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
দক্ষিণ আফ্রিকার আইনি দলের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন, সিনিয়র কাউন্সেল আদিলা হাসাম, জোহানেসবার্গ বারের একজন অ্যাডভোকেট টেম্বেকা এনগকুকাইতোবি এবং আন্তর্জাতিক আইনজীবী ম্যাক্স ডু প্লেসিস। দলে আরও রয়েছেন, আইনজীবী শিদিসো রামোগালে, সারাহ পুডিফিন-জোনস এবং লেরাটো জিকালালা। আইনজীবী দলকে পরামর্শ প্রদান করছেন, খ্যাতি সম্পন্ন আইনবিশারদ আইরিশ আইনজীবী ব্লিন নি ঘ্রালাই এবং ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ভন লো।
ইসরায়েল আদালতে লড়ার জন্য আইনজীবী দলের নেতৃত্বে রেখেছে ম্যালকম-শ কে। তাকে আন্তর্জাতিক আইনের বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি পূর্বেও আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারিক ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত থেকেছেন।
আঞ্চলিক বিরোধের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে তার। সমুদ্র আইন, রাষ্ট্র উত্তরাধিকার, বিদেশি সরকার এবং রাষ্ট্রের স্বীকৃতি, মানবাধিকার, স্ব-নিয়ন্ত্রণ, আন্তর্জাতিক সালিশি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার বিচারিক পরামর্শ দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সার্বিয়াসহ বিভিন্ন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। ম্যালকম-শ এর আগে ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস, ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস এবং বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষ আদালতের একাধিক মামলায় যুক্ত ছিলেন। ইসরায়েলের আইনজীবী দলে চারজন আইরিশ আইনজীবী রয়েছেন বলে জানা গেছে তবে তাদের নাম এবং বিশদ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে আইনের মাঠে নামার আগায় নানামুখী চাপে ধসে পড়ছে ইসরায়েল। গাজায় আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারছে না তেল আবিব। উল্টো বিশ্বজুড়ে সমর্থন হারাচ্ছে দেশটি। বিপরীতে ফিলিস্তিনের পক্ষে দিনে দিনে আরো জনমত তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আদালতও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।