জাতীয় সংবাদ

ঢাকার বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুনে নিহত ৪৬ জন

২ ঘন্টার আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়েছে বহু নারী শিশু

২০ জন পুর”ষ, ১৮ জন নারী ও ৮ জন শিশু এই মোট ৪৬ জন নিহত হয়েছে, বার্ণ ইউনিটে ভর্তি আরও ১৪ জনেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক, ভবন মালিককে ভবনটির ঝুঁকি সম্পর্কে ৩ বার নোটিশ করেছিল ফায়ার সার্ভিস, কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজারসহ আটক ৩ # পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনে অগ্নিকা-ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জনে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন এসব তথ্য জানান।এ ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ভর্তি আছেন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে আগুন লাগে। আগুন নেভানোর পর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
গতকাল রাতে বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাততলা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া ওপরের তলাগুলোতেও রয়েছে খাবারের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটি প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের সপ্তম তলা ও ছাদে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনতে থাকেন তাঁরা। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাত দুইটার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুর”তর আহত ৮ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং ১৪ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান। তাঁদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
এর আধা ঘণ্টা পর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালেও একজনের মরদেহ রয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টা ৪১ মিনিটে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুর” হয়েছে। হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এদের মধ্যে ৪০ জনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৬ জনের লাশ পরিচয়ের জন্য ডিএনএ টেস্ট করা হবে। অপরদিকে রাজধানীর বেইলি রোডে আগুন লাগা ভবনের নিচতলার চায়ের চুমুক রেস্টুরেন্টের ২ মালিক ও কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আটকরা হলেন, চায়ের চুমুকের মালিক আনোয়ার”ল হক ও শাকিল আহমেদ রিমন এবং কাচ্চি ভাইয়ের ম্যানেজার জিসান। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আগ্নিকা-ের কারণ জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য ঃ
শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের সার্বিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। পুলিশের পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, নিচতলায় দুটি খাবারের রেস্টুরেন্ট ছিল। পেছনের দিকে বড় এবং সামনের দিকে ছিল হালকা চা-কফির ছোট রেস্টুরেন্ট। ছোট রেস্টুরেন্ট থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সেই ভিডিও ফুটেজও সবার কাছে রয়েছে। আগুনের ঘটনায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা করতে পারবেন। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই অগ্নিকা-ের ঘটনায় ভবনের মালিকের দায়িত্বের কোনো অবহেলা রয়েছে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ভবন মালিক থেকে শুর” করে আগুনের ঘটনায় যাদের দায় পাওয়া যাবে তার বির”দ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকালের আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগুনে ২০ জন পুর”ষ ১৮ জন নারী ও আটজন শিশু মারা গেছেন। নিহতদের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এদের ৩৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুইজনের মরদেহ মর্গের ফ্রিজে রাখা হয়েছে। বাকী ছয় জনের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, আগুনের ঘটনায় ডিএমপি ও সিআইডি ঘটনার আলামত সংগ্রহ করেছে। গতকালের ঘটনার পরপর ঘটনাস্থলে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। এই ভবনে এতোগুলো গ্যাস সিলিন্ডার কোথা থেকে এলো এবং অগ্নিকা-ের সূত্রপাত কীভাবে হলো এসব অনেক ধরনের প্রশ্ন সামনে আসে। সেসব প্রশ্নের জবাব ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের কাছ থেকে আপনারা (সাংবাদিকরা) জেনেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত ও মামলার প্রক্রিয়ায় রয়েছি। যাদের এই ধরনের ব্যবসা কিংবা রেস্টুরেন্ট রয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. মহিদ উদ্দিন বলেন, শুধু ব্যবসার কথা চিন্তা করবেন না। জীবনের নিরাপত্তার কথা আগে চিন্তা করবেন। বাইরের দেশগুলোতে দেখেছেন জর”রি বের হওয়ার জন্য আলাদা সিঁড়ি রয়েছে। এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, রুটিন মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এরআগে বেইলি রোডে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটা ওই ভবন মালিককে তিনবার নোটিশ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই ভবনের সামনে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, রাজধানীর বেইলি রোডের ওই ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। মানুষের আসা-যাওয়ার জন্য কেবল একটি ছোট সিঁড়ি ছিল। অগ্নিকা-ের সময় মানুষ যে কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে কোনো জানালা ছিল না বলেও উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button