ইউনূস সেন্টার মিথ্যাচার করেছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রবাহ রিপোর্ট : ইউনেস্কোর পুরস্কার পাওয়া নিয়ে ইউনূস সেন্টার মিথ্যাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি বলেন, পুরস্কার নিয়ে মিথ্যাচার করা হয়েছে যে ইউনেস্কো (ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে) পুরস্কার দিয়েছে। আসলে এটি ইউনেস্কোর কোনও পুরস্কার নয়। এটি আজারবাইজানের বাকুতে ইউনেস্কো সংশ্লিষ্ট একটি সম্মেলনে মিজ হেদভা সের নামে একজন ভাস্কর, যিনি ইসরায়েলি, তিনি একটি পুরস্কার দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল, কিন্তু কোনোভাবেই এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে সেখানে দেওয়া হয়েছে। যেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হয়েছে। এটি মিথ্যা। অপপ্রচার করা হয়েছে। এর আগেও এ ধরনের মিথ্যাচার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এটি প্রথম নয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। মন্ত্রী বলেন, তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু গাজায় আজ নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এটি নিয়ে তিনি একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি বা প্রতিবাদ করেননি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ইউনূস সেন্টারের অফিসিয়াল ওয়েব পেজে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেওয়া হয়। তারা উল্লেখ করে, গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরামে ড. ইউনূসকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে, প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তর এই বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়। ১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এই সম্মাননা দেওয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে সেখানে ইউনেস্কোর কোনও অফিসিয়াল প্রতিনিধিত্ব ছিল না। আর ইউনূস সেন্টারের দাবি করা সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনও পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়। ড. ইউনূসকে ‘ট্রি অব পিস’ নামে একটি ভাস্কর্য স্মারক দেন ইসরায়েলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের। গত বুধবার এক বিবৃতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ) এ তথ্য জানায়। তারা বলে, ইউনূস সেন্টারের এই প্রচারণা প্রতারণামূলক ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার। এদিকে সোমালিয়ায় আটক বাংলাদেশি জাহাজের নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার করাই মূল উদ্দেশ্য বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, জাহাজ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে চাই, নাবিকদের মুক্ত করার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। আমরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার করা এবং জাহাজ উদ্ধার করা। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ওই জাহাজে খাদ্য সংকট নেই। সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে দুই বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে কোনও ধরনের হত্যাকা- চায় না। তিনি বলেন, আমরা চাই সীমান্তে এ ধরনের কোনও ঘটনা যেন না ঘটে। সরকারের পক্ষ থেকে বিজিবির মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং সীমান্ত বৈঠক হয়েছে। অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, ২৫ মার্চ লালমনিরহাটে কিছু বাংলাদেশি কাঁটাতারের বেড়া কেটে ওপারে যায়। বিএসএফ-এর ভাষ্য হচ্ছে তারা যখন চ্যালেঞ্জ করে তখন তারা (অনুপ্রবেশকারীরা) সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল এবং তারা বিএসএফকে ঘেরাও করে। তখন বিএসএফ গুলি ছোড়ে এবং দুই জন আহত হয়। আহত এক বাংলাদেশি এপাশে চলে আসে। আরেকজনকে ওপারে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। অন্য আরেকটি ঘটনায় নওগাঁ সীমান্তে ২৬ মার্চ একই ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং সীমান্ত বৈঠক হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমরা অনেকদিন ধরে আলাপ-আলোচনা করছি। আমি যখন সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়েছিলাম তখনও গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি যাতে সীমান্তে নন-লিথাল (প্রাণঘাতি নয় এমন) অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রাণঘাতি নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। সে কারণে রাবার বুলেট বা ছররা গুলিতে অনেকে আহত হন এবং তারা বাংলাদেশে চলে আসেন।