সম্পাদকীয়

আখ চাষিদের পাশে দাঁড়াতে হবে

চিনিকল হলো বাংলাদেশে একমাত্র ভারী কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, যেখানে কৃষক সরকার নির্ধারিত মূল্যে উৎপাদিত কৃষিপণ্য তথা আখ বিক্রি করতে পারেন। এ শিল্পের সঙ্গে হাজার হাজার আখচাষী, কৃষি শ্রমিক, কারখানা শ্রমিক, ট্রলি-ভ্যানচালক ও গরু-মহিষের গাড়িচালকের জীবন জীবিকা জড়িত। গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রেও রয়েছে চিনি শিল্পের অনস্বীকার্য অবদান। আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন এক শ্রেণীর রাজনৈতিক দলের নেতাদের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। তারা জনস্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। প্রাধান্য দিয়ে থাকেন করপোরেট স্বার্থকে। কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থের কথা তারা তেমন ভাবেন না। ভাবেন না ভোক্তা সাধারণের কথাও। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ২০২০ সালে রংপুর, শ্যামপুর, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, পাবনা ও সেতাবগঞ্জের মতো ছয়টি সরকারি চিনিকল লোকসানের অজুহাতে হঠাৎ বন্ধের সিদ্ধান্ত, যা ছিল জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। রাজশাহী ও জয়পুরহাটের মতো রুগ্ণ ও অধিক লোকসানি মিল দুটি চালু রেখে শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ ও পাবনার মতো সম্ভাবনাময় তিনটি চিনিকল বন্ধ করা কোনো অবস্থায় ঠিক হয়নি। পাবনার মতো একটি নতুন ও আধুনিক চিনিকল বন্ধের কারণ আমাদের মোটেও বোধগম্য নয়। ভয়াবহ সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ছয় কারখানা বন্ধ করে বিপদে ফেলে দেয়া হয়েছে কৃষকদের। দেশের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে চিনি। যা উচ্চমূল্যে ক্রয় করছে মানুষ। গত মাড়াই মৌসুমে নয়টি চিনিকলে চিনি উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ২১ হাজার ৩১৪ টন, যেখানে দেশের চাহিদা ১৮ লাখ টন। এ সুযোগে চিনি পরিশোধন কারখানাগুলো সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে নানা অজুহাত ও কৌশলে ৬০-৬৫ টাকা মূল্যের চিনি ১৩০ থেকে১৬০ টাকা কেজিতে কিনতে বাধ্য করেছে আমাদের। রাজনৈতিক দুস্টচক্রের হাত থেকে দেশের আখ মাড়াই কারখানাগুলো বাঁচাতে হবে। সেই সাথে বাঁচবে কৃষক। কারণ, একবার কোনো এলাকা থেকে আখ চাষ উঠে গেলে, সেখানে নতুন করে আখ চাষ করা অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কোনো এলাকায় দু-একজন কৃষক আখ চাষ করলে তা গরু-ছাগল ও মানুষ খেয়ে ফেলে। এছাড়া অন্য ফসলের তুলনায় আখ চাষে প্রচুর বীজের প্রয়োজন হয়। এক একর জমিতে ধান চাষে বীজ (ইনব্রিড) লাগে ১০ থেকে ১২ কেজি। পাট চাষে বীজ লাগে (ছিটিয়ে বুনলে) মাত্র তিন কেজি। আলু রোপণে বীজ লাগে ৬০০ কেজি মাত্র। অন্যদিকে এক একর জমিতে আখ চাষ করতে বীজ লাগে ২৪০০-২৫০০ কেজি। এ বিপুল পরিমাণ বীজ পরিবহণ, বীজ তৈরি, বীজ শোধন ও রোপণ করাটা খুব সহজ কাজ নয়। এখন নতুন করে পুরাতন কারখানাগুলো চালু করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সব বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে নামতে হবে। তাহলে আর কারখানা বন্ধ করতে হবে না। চিনির বাণিজ্য সিন্ডিকেট এমনিতেই অকার্যকর হয়ে যাবে। এভাবেই আখ মাড়াই কারখানাগুলো চালু করে কৃষক বাঁচাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button