সম্পাদকীয়

অদক্ষ ফার্মাসিস্ট দ্বারা ফার্মেসি পরিচালনা কোনোভাবেই কাম্য নয়

বর্তমানে দেশের সব জায়গায় হু হু করে বাড়ছে ফার্মেসির সংখ্যা। হাসপাতালের পরেই সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা হলো ফার্মেসি। জ্বর, মাথাব্যথা, ঠান্ডাজনিত কারণসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিকার পাওয়ার জন্য মানুষ ফার্মেসিমুখী হয়। বর্তমানে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে প্রায় সব জায়গাতেই কম বেশি ফার্মেসি রয়েছে। শহরের ফার্মেসিগুলোতে অভিজ্ঞ ফার্মাসিস্ট থাকলেও গ্রামের চিত্র ঠিক তার উল্টো। গ্রামের ফার্মেসিগুলোতে অদক্ষ ফার্মাসিস্টের পাশাপাশি থাকেনা ড্রাগ লাইসেন্স। গ্রামের ফার্মেসিগুলোতে লোকাল ঔষধের ছড়াছড়ি, এইসব কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই অনুমোদনহীন। তাছাড়া, অদক্ষ ফার্মাসিস্ট হওয়ায় সঠিক ঔষধ দেওয়া তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হলেও তারা নিজেদের মন মতো ঔষধ দিয়ে থাকেন। ফলে, রোগ মুক্তির চাইতে নতুন রোগ সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। সারাদেশে ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি রয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৭৯১টি। এটি নিবন্ধিত দোকানের সংখ্যা। তবে এর মধ্যে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৩টি ফার্মেসির নিবন্ধন মেয়াদোত্তীর্ণ। নিয়ম অনুযায়ী, ফার্মাসিস্ট ছাড়া ফার্মেসি নিবন্ধন পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে ওষুধের দোকানে গেলে ফার্মাসিস্টের দেখা মেলে না। তদারকি না থাকায় ফার্মাসিস্টহীন ওষুধের দোকান বছরের পর বছর অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ফলে রোগীরা সব সময়ই থাকছেন বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ফার্মেসিতেই জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের কোনো নিয়ম মানা হয় না। ফার্মেসিতে যে তাপমাত্রায় ওষুধ রাখার কথা, সেই তাপমাত্রায় রাখা হয় না। এতে ওষুধের গুণগত মানও বজায় থাকে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফার্মাসিস্ট থাকলে এসব ঝুঁকি অনেকটাই কমে যেত। বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের কাজ জোড়াতালি দিয়ে খুবই অল্প পরিসরে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফার্মাসিস্ট হলেন ওষুধ বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসক রোগীর রোগ নির্ণয় করে প্রেসক্রিপশন বা নির্দেশনা দেন। আর ফার্মাসিস্টের কাজ সেই প্রেসক্রিপশন পুনঃপরীক্ষণ, ওষুধ তৈরি, রোগীকে বিতরণ এবং ওষুধের ব্যবহারবিধি ও সংরক্ষণ নিয়ে রোগীকে পরামর্শ দেওয়া। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর পরপর ফার্মেসির নিবন্ধন নবায়ন করতে হয়। তবে গত বছর মাত্র ৪২ হাজার ৮৯৬টি ফার্মেসির নিবন্ধন নবায়ন করা হয়েছে। বাকি ১ লাখ ৭৩ হাজার ফার্মেসি অবৈধভাবে ব্যবস্থা পরিচালনা করছে। ওষুধ আইন অনুযায়ী নিবন্ধনের মেয়াদোত্তীর্ণ ফার্মেসিতে ওষুধ মজুত, প্রদর্শন ও বিক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে বছরের পর বছর অবৈধভাবে চললেও খুব একটা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি তদারকির দায়িত্বে থাকা ঔষধ প্রশাসনকে। বছরে একবার হলেও এসব ফার্মেসি পরিদর্শনের দায়িত্ব এই সংস্থার। তবে গত বছর মাত্র ৬৩ হাজার ৯৭১টি ফার্মেসি পরিদর্শন করা হয়েছে, যা মাত্র ২৯ শতাংশ। অনুমোদনহীন ফার্মেসির লাগাম টানতে ড্রাগ সুপারের নিয়মিত তদারকির প্রয়োজন আছে। এছাড়াও ড্রাগ প্রশাসন বিভিন্ন জনসচেতনতা তৈরি মূলক কর্মসূচি নিতে পারে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। নকল, ভেজালযুক্ত ঔষধ প্রতিরোধে ড্রাগ প্রশাসনকে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button