বিনোদন

অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা নেহার

প্রবাহ বিনোদন: বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে তরুণ প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রী নিদ্রা দে নেহা সম্প্রতি হঠাৎ করেই অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে তার অভিজ্ঞ করা কিছু তিক্ত বাস্তবতাÑযা কেবল একজন অভিনেত্রীর কণ্ঠে নয়, বরং একটি শিল্পভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার চিত্রও তুলে ধরে।
নেহা তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে অকপটে জানিয়েছেন, এ ইন্ডাস্ট্রিতে মেধা ও পরিশ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না। বরং এখানে অগ্রাধিকার পায় জনপ্রিয়তা, ফলোয়ার সংখ্যা এবং বিশেষ সিন্ডিকেটের অন্তর্ভুক্তি। দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “আমি সবসময় শিল্প, সংস্কৃতি আর অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করতে চেয়েছি। কিন্তু প্রতিনিয়ত অন্যায় আর অবমূল্যায়নের শিকার হয়ে সেই ভালোবাসা এখন ভেঙে পড়ছে।”
নেহার মতে, গত পাঁচ বছর তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন দক্ষ ও দায়বদ্ধ অভিনেত্রী হিসেবে। বিজ্ঞাপন দিয়ে যাত্রা শুরু করে অভিনয়ে তার পা রাখা ২০২৩ সালে, গৌতম কৌরীর ওয়েব ফিল্ম ‘আন্তঃনগর’ দিয়ে। এরপর একাধিক নাটক, ওয়েব সিরিজ ও সিনেমায় অভিনয় করে নিজের অবস্থান তৈরি করছিলেন ধীরে ধীরে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য চক্র বারবার তার পথরোধ করে এসেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, “প্রযোজকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকলে, জনপ্রিয়তা কম হলে কিংবা কোনো সিন্ডিকেটের সদস্য না হলে এখানে কাজ পাওয়া কিংবা টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়।” এমনকি চলতি মাসের শুরুতে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে তিনি শাকিব খান অভিনীত সিনেমা ‘তা-ব’-এ যুক্ত হয়েছেন। তবে জানা গেছে, একদিন শুটিং করেই তাকে ‘অনৈতিকভাবে’ এই সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
নেহা তার বক্তব্যে জানান, ক্রমাগত অবমূল্যায়ন ও পেশাগত অনিশ্চয়তায় তিনি মানসিকভাবে ভীষণভাবে ভেঙে পড়েছেন। এ অবস্থায় হাতে থাকা প্রকল্পগুলোর প্রতিও তার মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি শুধু নিদ্রা দে নেহার নয়, বরং অনেক তরুণ, প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরই অভিজ্ঞতা। তার এই প্রতিবাদ ও অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা যেন শোবিজের গভীরে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার দিকগুলো আবারও সামনে এনে দিয়েছে।
নেহার এই সিদ্ধান্ত আমাদের বড় একটি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়Ñশিল্প কি শুধুই বিনোদন, নাকি একটি মূল্যবোধের জায়গা? যেখানে মেধা, পরিশ্রম, সততা আর ভালোবাসা জায়গা করে নেয় সিন্ডিকেটের চেয়ে আগে?
অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা নিদ্রা দে নেহার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হলেও, তার বক্তব্য শোবিজ অঙ্গনের জন্য একটি আত্মসমালোচনার জায়গা তৈরি করেছে। শিল্প ও সংস্কৃতির জগতে যদি মেধা অবদমন আর অনৈতিকতার ছায়া দীর্ঘ হয়েই থাকে, তাহলে আগামী প্রজন্ম কীভাবে নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাবে?

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button