আন্তর্জাতিক

হামাসের ‘দুর্বল’ হয়ে পড়ার সুযোগ নিতে চাইছেন নেতানিয়াহু

প্রবাহ ডেস্ক : ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে জানা গেছে যে হামাসের সামরিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে। তাই তারা যুদ্ধবিরতি চাইছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইসরায়েলের অবস্থান কঠোর করেছেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে। সমঝোতার আলোচনায় জড়িত এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আলোচনার শর্তে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের অবস্থান কঠোর করেছেন। তিনি চেষ্টা করছেন, আলোচনার মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব আদায় করে নিতে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, কিন্তু এখানে একটি ঝুঁকি রয়েছে। তিনি হয়ত অনেক বেশি চেয়ে বসতে পারেন এবং আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে। নেতানিয়াহু চুক্তি চান। কিন্তু শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে চান। যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য কাজ করছেন। এর আওতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা ও বেশ কয়েকজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, গাজায় সামরিক অভিযান নিয়ে ইসরায়েলের ওপর চলমান চাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসকে চুক্তি স্বাক্ষরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, গাজায় অবস্থানরত কয়েক জন সিনিয়র হামাস কমান্ডার গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং তারা একটি যুদ্ধবিরতি চান। বুধবার অপর এক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক মার্কিন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছিল, হামাস কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে, তাদের অস্ত্র ও সরঞ্জাম ফুরিয়ে যাচ্ছে। গাজার ডি ফ্যাক্টো শাসক গোষ্ঠী বেসামরিকদের ক্ষোভের মুখে পড়ছে। বেসামরিকরা এখন প্রকাশ্যে যুদ্ধবিরতির দাবি জানাচ্ছে। বৃহস্পতিবার আলোচনার জন্য ইসরায়েলের অবস্থান তুলে ধরেছেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েল সরকারও জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তির চাপে রয়েছে। নেতানিয়াহু চুক্তির জন্য চারটি শর্ত তুলে ধরেছেন, যেগুলো নিয়ে কোনো দরকষাকষি করা যাবে না। আগে থেকেই এই চারটি শর্ত থাকলেও এবার দুটি শর্ত নিয়ে অবস্থান আরও কঠোর করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, যেকোনও চুক্তিতে যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ার পর্যন্ত ইসরায়েলকে লড়াই পুনরায় শুরুর সুযোগ দিতে হবে। চুক্তির মাধ্যমে মিসর থেকে গাজায় অস্ত্র পাচারও ঠেকাতে হবে। যার অর্থ হবে গাজা-মিসর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু আরও বলেছেন, যেকোনও চুক্তিতে গাজার উত্তরাঞ্চলে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ফেরত আসা ঠেকাতে হবে। এ ছাড়া চুক্তিতে প্রথম ধাপেই সর্বোচ্চ সংখ্যক জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। এর আগে রোববার তিনি চুক্তির প্রথম ধাপে এই দাবির কথা তুলেননি। তিনি আশাবাদী জিম্মিদের মুক্তিতে চুক্তি হবে এবং লক্ষ্য অর্জন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে ইসারয়েল। সর্বশক্তি দিয়ে হামাসের ওপর চাপ বজায় রাখবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, গাজা-মিসর সীমান্তের নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। মিসর হামাসের সুড়ঙ্গ ঠেকাতে একটি দেয়াল নির্মাণে রাজি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন করবে। এর মাধ্যমে মিসর থেকে গাজায় অস্ত্র পাচার ঠেকানো সম্ভব হবে। তবে ইসরায়েল চায় সেখানে সেন্সর ও ক্যামেরা স্থাপন করতে। এই দাবি পূরণ হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত চুক্তিতে নিরস্ত্র ও বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু এতে উল্লেখ করা হয়নি কীভাবে হামাস যোদ্ধা ও অস্ত্রের স্থানান্তর ঠেকানো হবে। এই বিষয়ে ইসরায়েলি, মিসরীয়, কাতারি ও মার্কিন মধ্যস্থতাকারীরা একটি সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button