খুলনায় কতিপয় চিকিৎসকের অতিরিক্ত পরীক্ষার ফাঁদে অসহায় রোগী

কমিশনে পাঠানো হচ্ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে
শেখ ফেরদৌস রহমান ঃ সরকারী হাসপাতালের কতিপয় অসাধু অসাধু আর অর্থলোভি চিকিৎসকদের অতিরিক্ত পরীক্ষার ফাঁদে পড়ছে রোগীরা। সৃষ্টিকর্তার পর চিকিৎসকরা যেখানে রোগীর আশা-ভরসার স্থল সেখানে কমিশনের আশায় ফাঁসানো হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধিন বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এছাড়া এসব গরীব অসহায় রোগীদের দামি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সামর্থ আছে কিনা তা দেখার ও সময় নেই এসব অসাধু চিকিৎসকদের। এছাড়া জানা যায়, যেসব রোগীদের পাঠানো হচ্ছে প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেখানে রোগীদের বলা হয় আপনাকে কোন স্যার পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি রোগীর ব্যবস্থাপনা পত্রে দেখে ওই চিকিৎসকের নামে আইডিতে যোগ হয় রোগীর পরীক্ষা বাবদ খরচের একটি বড় অংশ। এমনকি সাপ্তাহিক বা মাসিক হিসেবে কমিশনের অংশ চলে যাচ্ছে সরাসরি চিকিৎসকের কাছে। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত থাকলেও নেয়া হচ্ছে না কার্যকরি কোন পদক্ষেপ। এ বিষযে কথা হয় ভুক্তভোগী রোগী কবীর মোল্লার সাথে তিনি বলেন, “আমি পেশায় একজন কৃষক। বাগেরহাটের কচুয়া থেকে এসেছি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমি হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগে ১১৩ নাম্বার কক্ষে নিউরোসার্জারি চিকিৎসক ডাঃ তরুণ কান্তি ঘোষ এর কাছে গেলে তিনি বলেন, আপনার ভর্তি হতে হবে। তবে, তার আগে আপনার মাথায় সমস্যা আছে কিনা দেখতে হবে। আপনি এখনই খুলনা সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেয়ে মাথার সিটিস্ক্যান, সিবিসি, ইউরিন আর এমই, টিএসএইচ, আরবিএস, পরীক্ষা করে নিয়ে আসেন। আমি তার কথা মত পরিক্ষা করতে গেলে আমার কাছে পরীক্ষার খরচ বাবদ ৬ হাজার টাকা লাগবে বলে। আমি তাৎক্ষনিক ৩ হাজার টাকা দিয়ে পরীক্ষা করে আসি। পরবর্তিতে রিপোর্ট নেয়ার সময় বাকি টাকা পরিশোধ করে আসি। এখন আমার কাছে ওষুধ কেনার কোন টাকা নেই। আমি আমার মেয়ের জামাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এসেছিলাম চিকিৎসা নিতে। আমি পরে জানতে পারলাম এসব পরীক্ষা এই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করা যায় মাত্র ২৬শ টাকা খরচ হতো। আমি ডাঃ স্যারের কথা মত এই প্রখর রোদে সেই খুলনা সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আরও দুইশ টাকা যাতায়াত ভাড়া দিয়ে পরীক্ষা করেছি। আমরাতো কিছু বুঝতে পারিনি, আমরা গরীব মানুষ, অশিক্ষিত।” এভাবে তারসাথে ঘটে যাওয়ার ঘটনার বর্ননা দিলেন গরীব দিনমজুর কৃষক কবীর মোল্লা। এ বিষয়ে ডাঃ তরুণ কান্তি ঘোষ বলেন, আমি জানিনা কে এসেছিল। প্রতিদিন শত শত রোগী দেখা হয়। তবে গরীব হলে আমি তার জন্য কিছু ডিসকাউন্ট করব। এছাড়া জানা যায় খুলনা সদর হাসপাতালে অন্যান্য বহির্বিভাগ ও গাইনী বিভাগের কতিপয় চিকিৎকরা প্রতিদিন নিজ পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠিয়ে মাসিক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এ দিকে অসহায় গরীব রোগীরা পড়ছে অতিরিক্ত অর্থ খরছে। এ বিষয়ে কথা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপঃ পরিচালক ডাঃ হুশাইন শাফায়েতের সাথে তিনি বলেন, আমরা এর আগেও একই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তিন চারবার অভিযোগ পেয়েছি। আমি বিষয়টি দেখছি। মুলতঃ যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা যাবে। আমি কেন রোগীদের বাহিরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেব। এধরনের কাজ বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে খুলনা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহাম্মাদ কামাল হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি ও নজরদারি করছি । কোন চিকিৎসক এমন কাজে জড়িত থাকলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।