তদন্ত শোকজ ছাড়াই পাইকগাছা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহবায়ককে দল থেকে বহিস্কার

স্টাফ রিপোর্টারঃ অভিযোগের তদন্ত ও শোকজ না করেই গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পাইকগাছা উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহবায়ককে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি। দলীয় সূত্রে প্রকাশ, বুধবার বেলা ১১টার দিকে পাইকগাছার বাসিন্দা ম্যাগনেট ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত নির্মল ঋষী নামের এক ব্যক্তি কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দের নিকট কান্না জড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে। তিনি পাইকগাছা উপজেলা শ্রমিক দলের সদস্য সচির ও ইউপি মেম্বর মশিউর রহমান মিলনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মিলন তার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। তা না হলে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। দলের কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারি হেলালসহ অন্যান্যের নিকট মৌখিকভাবে এ অভিযোগ করেন। আজিজুল বারি হেলাল জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পীকে মৌখিক অভিযোগটি তদন্ত করে দেখার জন্য বলেন। কিন্তু বাপ্পী অভিযোগ তদন্ত না করে তা আমলে নিয়ে মিলনকে দল থেকে বহিস্কার করেন। তার শ্রমিকদলের যুগ্ম আহবায়কসহ দলের সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বেলা ১১টায় নির্মল ঋষী মৌখিক অভিযোগ কলে মিলনের বিরুদ্ধে। দুপুর ২টা নাগাদ তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন। জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি উজ্জল কুমার সাহা বলেন, “আমাকে জেলা শ্রমিক দলের সাঃ সম্পাদক ইসমাইল খান বলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বাপ্পী পাইকগাছা উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহবায়ক মিলনকে দল থেকে বহিস্কার করতে বলেছেন। তখন আমি কারণ জানতে চাইলে ইসমাইল বলেন, মিলনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত না করে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। নিয়ম হচ্ছে, অভিযোগটি লিখিতভাবে জমা নিতে হবে। পরে তদন্ত করতে হবে। অভিযুক্তকে শোকজ করতে হবে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে-এটাই দলের গঠনতন্ত্র। উজ্জল সাহা আরো বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে তাৎক্ষণিক মোবাইলে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডাঃ আঃ মজিদের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু তিনিও বিষয়টি মিথ্যা ও মিলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে আমাকে জানান।” অভিযুক্ত মশিউর রহমান মিলন বলেন, নির্মল ঋষী একজন ম্যাগনেট ব্যবসায়ী। এলাকায় প্রতারক হসেবে পরিচিত। সে খুলনার গাড়ির গ্যারেজ মালিক তরিকুলকে প্রলোভন দেখিয়ে নির্মলসহ দু’জন সাড়ে ৬লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি তিনি শালিস করেন। এতে নির্মল দোসী হয়। গত দু’মাস আগে এ শালিস করা হয় মেম্বরের নিজস্ব অফিসে। কিন্তু শালিস করার পর সে টাকা না দিয়ে নানা টালবাহানা করতে থাকে। এতে করে মেম্বর তাকে বকাঝকা করেন। এই টাকা যাতে না দিতে হয় সে জন্য নির্মল ঋষী এ মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া একজন অভিযোগ করলেই তা তদন্ত না করে দল থেকে বহিস্কার করা যায় না। এটা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বলে তিনি জানান। খুলনার নুরনগরের গ্যারেজ মালিক তরিকুল ইসলাম জানান, “আমাকে নির্মল ঋষী ও আরেকজন প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে ৬ লাখ টাকা নেয়। গত ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এ টাকা নেয়। পরে তারা তার কোন লাভ বা আসল কোনটাই দেয়নি। দিনের পর দিন ঘুরায়। বিষয়টি ইউপি মেম্বর মিলনকে লিখিতভাবে জানাই। মিলন শালিস করলে নির্মল ঋষী দোষী সাব্যস্ত হয় এবং শিগগিরই আমার টাকা ফেরৎ দিবে বলে শালিসীতে কথা দিয়ে আসে। কিন্তু এরপর আর কোন খবর নেই। আমার টাকা যাতে দিতে না হয় সে জন্য নির্মল ঋষী এই মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে বলে তরিকুল মনে করেন।” জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক এলাকায় খোঁজখবর নেই। অভিযোগের সত্যতা পাই। দলের সিদ্ধান্ত মতে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। ৫ আগস্টের পর ভাংচুর লুটপাট অগ্নি সংযোগ আর চাঁদাবাজির সাথে যারা জড়িত। তাদের ব্যাপারে দল কোন ছাড় না দেয়ার জন্য বলেছেন। এখানে গঠনতন্ত্র অনুসরনের কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তা সত্য হলে তাকে দল থেকে বহিস্কারের জন্য কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে বলে তিনি জানান।