জাতীয় সংবাদ

মতিউরের হদিস নেই, কাগজে-কলমে মন্ত্রণালয়ে যোগদান

‘ছাগলকাণ্ডে’

প্রবাহ রিপোর্ট : বহুল আলোচিত ‘ছাগলকা-ে’ সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ হারানো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট) ড. মো. মতিউর রহমানের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্তি করায় তিনি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ থেকে মতিউর রহমানকে সরিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্তি করার পরই তিনি ‘লোক পাঠিয়ে’ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে মতিউরের জন্য আলাদা কোনও কক্ষ নেই। এমনকি, তার বসার জন্য কোনও চেয়ার-টেবিলও নেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার পর তিনি মন্ত্রণালয়েও আসেননি। অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি যোগদানপত্র পাঠিয়ে যোগ দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে মতিউর রহমানকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্তি করার অর্থ হলো তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। সংস্থাপন বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য ওএসডি করার বিধান আছে। এর বাইরে অন্য বিভাগ, সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের জন্য ওএসডির বদলে সংযুক্ত করার পদ্ধতি চালু আছে। মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে সেটিই করা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মতিউর রহমান পদোন্নতি পেয়ে এনবিআর’র সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট) হয়েছেন। তিনি এখনও ওই পদেই আছেন। তবে, তাকে যেহেতু অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে, সুতরাং তিনি এনবিআর’র কোনও কার্যক্রম করতে পারবেন না। তার কর্মক্ষেত্র হবে অভ্যান্তরীণ সম্পদ বিভাগ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে তার জন্য আলাদা কোনও কক্ষ বা চেয়ার-টেবিল থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, মতিউর রহমানকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার পর ইতোমধ্যে তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেছেন। কিন্তু যোগদান করতে তিনি নিজে আসেননি। অন্য মানুষ পাঠিয়ে যোগদান করেছেন। মন্ত্রণালয়ে যোগ দিলেও তার জন্য আলাদা কোনও কক্ষ বা চেয়ার-টেবিল নেই।
এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা গুঞ্জন শুনছি, মতিউর রহমান দেশে নেই। তিনি দেশের বাইরে চলে গেছেন। এ কারণেই হয়তো তিনি অন্যের মাধ্যমে যোগদানপত্র পাঠিয়ে যোগদান দিয়েছেন। অন্যের মাধ্যমে পত্র পাঠিয়ে যোগদান করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।
ছাগলকা-ে আলোচনায় আসার পর মতিউর রহমানকে সর্বশেষ ঈদের দ্বিতীয় দিন (১৮ জুন) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ইন্টারভিউতে দেখা যায়। এরপর বসুন্ধরা, ধানমন্ডিসহ মতিউরের বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি তার। এমনকি, কোরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর এনবিআর কার্যালয়ে আসেননি। গুঞ্জন রয়েছে, রোববার (২৩ জুন) বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর ভারতে চলে গেছেন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়া চলে গেছেন ছাগলকা-ে আলোচিত মুশফিকুর রহমান ইফাত, তার বোন ইফতিমা রহমান মাধবী ও মা শাম্মী আকতার। ইফাত মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান।
অন্যদিকে, মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ ও তার ছেলে দেশে থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, লায়লা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান। এই পদে গত ২৯ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে সংঘর্ষের কারণে ভোট হয়নি। লায়লা উপজেলা নির্বাচনে এবারও চেয়ারম্যানপ্রার্থী।
উল্লেখ্য, ইফাতের ছাগল কেনার বিষয়টি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই তা ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়। এরপর বেরিয়ে আসে এই কর্মকর্তা ও তার পরিবারের অঢেল অবৈধ সম্পদের খবর।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে। একইদিন কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়া, তিনি হারিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদও।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button