শিল্পকলার ১০ কর্মকর্তা ওএসডি

প্রবাহ রিপোর্ট : বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির ১০ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। গত রোববার মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের সই করা এক অফিস আদেশে তাদের প্রশাসন বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। অফিস আদেশে বলা হয়েছে, পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কর্মকর্তারা প্রশাসন বিভাগে সংযুক্ত থাকবেন। এদিকে ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর ‘সুবিধাভোগী’ এবং জেলা কালচারাল অফিসার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও ঢাকায় থাকতে নানা কৌশল অবলম্বনের অভিযোগে অভিযুক্ত। ওএসডি হওয়ার পর তারা বলছেন, বিধিসম্মতভাবে যে ওএসডি করা হয়েছে তা তারা মেনে নিয়েছেন। তারা কোনো বেআইনি কাজ করেননি বলেও দাবি করেছেন। যদিও তাদের বেশিরভাগের কণ্ঠে সাবেক মহাপরিচালককে নিয়ে অভিমান। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ আদেশ দিলে সেটা মেনে চলা ছাড়া উপায় থাকে না বলেই হয়তো সাবেক মহাপরিচালকের অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা। তবে, বড় অভিযোগ থাকলেও কেউ কেউ সব আমলে ‘সুবিধাভোগী’ থাকে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। ওএসডি হয়ে প্রশাসন বিভাগে সংযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন- সংগীত নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের সহকারী পরিচালক খন্দকার ফারহানা রহমান, অর্থ, হিসাব ও পরিকল্পনা উপবিভাগের উপপরিচালক মো. এ এম মোস্তাক আহমেদ, মহাপরিচালকের পিএস (সহকারী পরিচালক) আবু ছালেহ মো. আবদুল্লাহ, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদ, অর্থ, হিসাব ও পরিকল্পনা উপবিভাগের সহকারী পরিচালক (এডি) মোহাম্মদ আল হেলাল, কালচারাল অফিসার সৈয়দ সাহিদা বেগম, কালচারাল অফিসার মো. আসফ উদ-দৌলা, কালচারাল অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) হাসান মাহমুদ এবং মহাপরিচালকের দপ্তরের কালচারাল অফিসার সাদিয়া বিনতে আফজল। ২০২১ সালের ২৪ জুন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাজমা বেগমের সই করা বদলির আদেশে বলা হয়, শিল্পকলা অ্যাকাডেমির অনুমোদিত অর্গানোগ্রামে সদর দপ্তরে জেলা কালচারাল অফিসারের পদ না থাকায় গত ৭ এপ্রিল অ্যাকাডেমির ১২০তম পরিষদ সভার অনুচ্ছেদ ৬-এর সিদ্ধান্ত-২ মোতাবেক কিছু কর্মকর্তাকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আফসানা খান রুনাকে মুন্সীগঞ্জ, শহিদুল ইসলামকে সাতক্ষীরা, ফারহানা রহমানকে শেরপুর, চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদকে চুয়াডাঙ্গা, এরশাদ হাসানকে টাঙ্গাইল, আল হেলালকে নওগাঁ, আসাফ-উদ-দৌলাকে বরগুনা এবং হাসান মাহমুদকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়। ৩০ জুনের মধ্যে তাদের কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু দুই জন বাদে বাকিরা ঢাকাতেই থেকে যান এবং আদেশের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হন। কালচারাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেলেও সে সময় ঢাকায় থেকে জনসংযোগ বিভাগের কাজ করছেন হাসান মাহমুদ। ১২০তম পরিষদের সভায় তাদের নিজ কর্মস্থল দিনাজপুরে ফেরার সিদ্ধান্তের পর তারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনিবলেছিলেন, এ জবাব আমার কাছে নেই। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই হবে। কিন্তু তারপরেও তিনি ঢাকাতেই অবস্থান করেছেন। লিয়াকত আলী লাকীর কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণেই ওএসডি হতে হলো কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম, অফিসের স্বার্থে অনেক বাড়তি কাজ করতে হয়েছে। সে কারণেই হয়তো আমাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে। অভিমান নিয়েই তিনি বলেন, কর্মচারীরা কোনো মহাপরিচালকের থাকে না। তারা দায়িত্ব পালন করেন। ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা এখনই কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে চান না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন বলেন, আমরা জেলা কালচারাল অফিসার। কিন্তু যদি ঢাকায় রাখার আদেশ দেওয়া হয় তাহলে আমাদের কী করণীয়? সেক্ষেত্রে সাবেক মহাপরিচালককে দায়ী করছেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার আদেশ পালন ছাড়া কী করণীয় ছিল? আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমি সেটা পালন করেছি। তাহলে কেন জেলায় না যেতে চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন প্রশ্নে আরেক কালচারাল অফিসার বলেন, আমরা জেলায় যাবো না বলে আদালতের শরণাপন্ন হইনি। আমরা বলেছিলাম, অ্যাকাডেমি একটা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় চাইলেই কাউকে বদলি করতে পারে না। সে সময় চুয়াডাঙায় বদলি হওয়া চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদ এখন পর্যন্ত ঢাকা অফিসে। তিনি চলচ্চিত্র বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।তিনি সে সময় জানান, ২৪ জুন মন্ত্রণালয় কর্তৃক আমাদের যে বদলির অর্ডার, সেটা চ্যালেঞ্জ করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলাম এই বলে যে, এটা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার বহির্ভূত। পরিষদের সভা থেকে আমাদের বদলি হওয়ার জায়গায় স্বপ্রণোদিত হয়ে যেতে হবে বলা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু যে বিষয় নিয়ে আদালতে গিয়েছি, সেটা নিয়ে স্বপ্রণোদিত হওয়ার কতটুকু সুযোগ আছে? ওএসডি বিষয়ে আরেকজন কালচারাল অফিসার মো. আসফ উদ-দৌলা বলেন, আমাদের প্রবিধানমালা অনুযায়ী এসব নিয়ে কথা বলার অনুমতি নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওএসডি হওয়া আরেক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের নাম হয়েছে সাবেক ডিজির লোক হিসেবে। কিন্তু তার কাছ থেকে কোনো সুবিধা পেলাম না। উল্লেখ্য, লিয়াকত আলী লাকী শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ সপ্তমবারের মতো তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত অনুসন্ধান করে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে ২২৭ কোটি ৭১ লাখ ১৭ হাজার ৪৫৯ টাকার অনিয়মের সন্ধান পায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। বিষয়টির জবাব দিতে দুই সপ্তাহ সময় নিলেও মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়কে আর জবাব দেয়নি অ্যাকাডেমি। মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করেন। তাতে অনিয়মের ৭২টি ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে।