জুলাই আন্দোলনে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
# চার উপদেষ্টাকে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে থাকার আল্টিমেটাম #
প্রবাহ রিপোর্ট ঃ গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের দেখতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি সবার সঙ্গে দেখা করেননি অভিযোগ তুলে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পথে তাঁর পথ আটকে বিক্ষোভ করেন আহত ব্যক্তিরা। হাত, পা, চোখে ব্যান্ডেজসহ এই ব্যক্তিরা হুইলচেয়ারে করে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তাঁদের সবার সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত তাঁরা রাস্তা ছাড়বেন না। এ ছাড়া ঘোষণার পরও এখনো আহত ব্যক্তিদের এক লাখ টাকা করে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিতে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পঙ্গু হাসপাতালে যান। তিনি আহত কয়েকজনের খোঁজখবর নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে যান। ততক্ষণে সেখানে আহত ব্যক্তিরা ভিড় করেন। তাঁদের সরে যেতে বললে আহত ব্যক্তিরা উপদেষ্টার গাড়ির সামনে পথ আটকে দাঁড়ান। কেউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে দু-একজনকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপরে উঠতে দেখা যায়। তাঁরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অন্য একটি গাড়িতে চড়ে চলে যান। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে হাসপাতালে আসা যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। পরে তিনিও অন্য একটি গাড়িতে হাসপাতাল থেকে চলে যান। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউল হক বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিরাপদে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। তাঁর গাড়িটি অক্ষত আছে। পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহত ৮৪ জন এখনো চিকিৎসাধীন বলে হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর আহত ব্যক্তিরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল চিকিৎসাধীন এই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরাও সেখানে এসে বিক্ষোভে যোগ দেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে সেনা সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের রাস্তা ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। তখন আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে হুইলচেয়ারে বসে আহত মো. মাসুম বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত তাঁরা রাস্তা ছাড়বেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালের চতুর্থ তলায় গেলেও তাঁদের দেখতে তিনতলায় যাননি। তিন মাস পর হাসপাতালে এলেও তিনি তাঁদের উপেক্ষা করেছেন। মো. মাসুম বলেন, আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেশির ভাগই তা হাতে পাননি। বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান করছিলেন।
চার উপদেষ্টাকে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে থাকার আল্টিমেটাম ঃ জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। সুচিকিৎসার দাবিতে বুধবার (১৩ অক্টোবর) রাত ৮টা পর্যন্ত রাস্তার ওপর তাদের হুইল চেয়ার ছাড়াও চেয়ার পেতে ভাঙা পা নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। এর আগে একই দিন দুপুর সোয়া ১টার দিকে পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়ক বন্ধ করে সেখানে অবস্থান নেন জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন আহতরা। জানা গেছে, রাত ১০টার মধ্যে স্বাস্থ্য, তথ্য, সমাজকল্যাণ ও ক্রীড়া উপদেষ্টাকে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে উপস্থিত হওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
এদিকে রাতে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে অবস্থানরত আহতদের সঙ্গে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সমস্যা সমাধানে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, তিন মাস পর আমার ভাইয়েরা এখনো রাস্তায় আছে, এটাই আমার জন্য সবচেয়ে লজ্জার। এই সমস্যার সমাধান কীভাবে করা যায়, সে জন্য আমাকে একটু সময় দিন। এর আগে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শনে যান ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ওই সময় তারা চতুর্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে আহতদের দেখলেও তৃতীয় তলায় চিকিৎসাধীন অন্যদের পরিদর্শনে যাননি। এ নিয়ে তৃতীয় তলার ওয়ার্ডে থাকা আহতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তারা নিচে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকে দেন। ধারণা করা হচ্ছিল সেই গাড়িটি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ব্যবহার করতেন। তবে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ওই সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনারের গাড়িতে উঠে হাসপাতাল ত্যাগ করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। পরবর্তীতে বিষয়টি বুঝতে পেরে আহতরা আগের গাড়িটি ছাড়াও পুলিশের একটি প্রোটোকল গাড়ি আটকে দেন। এতপর্যায়ে সুচিকিৎসার দাবিতে দুপুর সোয়া ১টার পর তারা রাস্তায় নামেন।