সাবেক মন্ত্রী-উপদেষ্টাসহ ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখালো ট্রাইব্যুনাল

প্রবাহ রিপোর্ট : জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টাসহ ১৩ জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে মামলার অন্য আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজির ও মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলার তদন্ত শেষ করতে এক মাস সময় মঞ্জুর করা হয়। গ্রেপ্তার দেখানো ১৩ জন হলেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ডা. দীপু মনি, শাজাহান খান, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, গোলাম দস্তগীর গাজী, কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম। এদিকে অসুস্থ থাকায় ড. আব্দুর রাজ্জাককে আনা হয়নি বলে জানা গেছে। এতদিন অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তারা সবাই কারাগারে ছিলেন। এর আগে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামাকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে প্রথম দিনের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। এদিন পাঁচ আসামির পক্ষে শুনানি করতে এসে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছেন- এমন খবরে শুনানি থেকে বিরত থাকেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী। এ সময় তার অধীনস্ত জুনিয়র আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু আদালতে শুনানি করতে এলে তার কাছে যথাযথ আবেদন না থাকায় আদালতে তিনি শুনানি করতে পারেননি। সাবেক মন্ত্রীসহ ১৩ আসামির পক্ষে কোনো শুনানি হয়নি। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাশ কক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের শুনানি শেষ হবার পর আসামি পক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু শুনানি করতে যান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও ফারুক খানের। এ সময় শুনানি করার আগে বিচারকদের কাছে শুনানি করতে যে আবেদন দেওয়া হয়, সেটা না থাকায় চিফ প্রসিকিউটর আদালতের নজরে আবেদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তখন আবেদন না আনার বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ক্ষমা চান। আদালত আইনজীবীকে বলেন, আবেদন ছাড়া কি শুনানি করা সম্ভব? জবাবে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, আদালত চাইলে সম্ভব, যদি অনুমতি দেওয়া হয়, আমি শুনানি করতে চাই। এ সময় আদালত তাকে শুনানি করতে নিষেধ করেন। গতকাল সোমবার জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সকালে ১১টায় আসামিদের এজলাশের মধ্যে কাচের দেয়ালে ঘেরা একটি অংশে বসতে দেওয়া হয়। সেখানে ১২টি চেয়ার থাকায় ভেতরে ১২ জন বসেন। শুধু দীপু মনি একা একটি চেয়ারে বাইরে বসেন। সকাল ১১টা ১০ মিনিটে প্রথমে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। ছাত্র-জনতাকে হত্যা, নির্বাচনের নামে প্রহসন, বিডিআর ট্রাজেডির কারণ, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ওপর গণহত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- ও আয়না ঘর তৈরি, ১১১৯ জনকে বিচার বহির্ভূত হত্যা, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার, শেয়ার বাজার লুট, রাজাকার ট্যাগ দিয়ে দেশের মানুষকে পৃথক করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী দিয়ে ছাত্র জনতার ওপর হামলা, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যা করার নির্দেশ দেবার কারণে সুপিরিয়র হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রীদের বিচার করার কথা আদালতের সামনে তুলে ধরেন তাজুল ইসলাম। পাশাপাশি জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন ইন্টারনেট বন্ধ করায় বিষয়টি আদালতের সামনে উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়াও টকশোতে সাবেক বিচারপতি মানিকের দেওয়া বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে কীভাবে পুলিশ সেগুলো ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল, সে বিষয়ও তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় শহীদ নাফিসকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশ রিকশাচালককে নাফিসের লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছে, সেটিও আদালতকে জানানো হয়। যাত্রাবাড়ীতে এক বন্ধুর সামনে আরেক বন্ধুকে পুলিশ গুলি করে, সেটাও উল্লেখ করা হয়। বিচারকাজ পুরোপুরি শুরু করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতের কাছে সব প্রমাণ জমা দেওয়ার জন্য দুই মাসের সময় চান। আদালত তাকে এক মাসের সময় দেন। এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত বাকি আসামিদের আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে আদালত আগামী ১৭ ডিসেম্বর ‘সাবমিশন অব ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট’ দেওয়ার আদেশ দেন। আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী ও আত্মীয় স্বজনদের এজলাশ কক্ষে দেখা করার জন্য কিছু সময়ের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে বেলা দেড়টায় প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের আদালত থেকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।