জাতীয় সংবাদ

পুড়ে অঙ্গার ৬ দেহ : ৩ দিনেও মেলেনি পরিচয়

# মাইলস্টোন স্কুল ট্রাজেডি #
# সন্তানের দাঁতে মিলবে বাবার পরিচয়! #

প্রবাহ রিপোর্ট ঃ রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এর হিমঘরে পড়ে থাকা ছয়টি মরদেহ এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অগ্নিদগ্ধ মরদেহগুলো এতটাই পুড়ে গেছে যে স্বাভাবিক গঠন, মুখম-ল বা পোশাকের কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই। এমন পরিস্থিতিতে তদন্তকারী সংস্থা ও চিকিৎসকেরা মরদেহ শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ (উঘঅ) টেস্টের ওপরই সম্পূর্ণ ভরসা রাখছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, অগ্নিদগ্ধ মরদেহে সাধারণত আঙুলের ছাপ থাকে না এবং চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। তবে দাঁত তুলনামূলকভাবে আগুনে বেশি টিকে থাকে। এর কারণ হলো দাঁতের বাইরের স্তরে থাকা এনামেল মানবদেহের সবচেয়ে শক্ত উপাদান। ফলে অনেক সময় দাঁতের অভ্যন্তরে থাকা পাল্প টিস্যুতে জীবিত কোষের ডিএনএ রক্ষা পায়, যা শনাক্তকরণে সহায়ক হয়ে ওঠে।
তবে, যদি কোনো মরদেহের দাঁত অতিরিক্ত পুড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায় বা ডেন্টাল স্যাম্পল নেওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে মরদেহের হাড়ের ভেতরের অংশÍঅর্থাৎ বোন ম্যারো থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। এরই মধ্যে মরদেহের সম্ভাব্য স্বজনদের কাছ থেকে চুলের গোড়া, নখ বা গালের ভেতরের কোষ (বুকাল সেল) সংগ্রহ করে অভিভাবক-সন্তান ডিএনএ মিলন পদ্ধতিতে শনাক্তের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, এখনো পর্যন্ত অজ্ঞাত ছয়টি মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কিছু ডিএনএ নমুনা দেওয়া হয়েছে। আরও যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি অনুরোধÍ সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে গিয়ে নমুনা দিন। তা হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডিএনএ মিলিয়ে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে। রাজধানীর সরকারি একটি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক বলেন, ডিএনএ শনাক্তকরণে দাঁত অনেক বড় ভূমিকা রাখে। যদি দাঁত না থাকে, তখন আমরা হাড়ের অভ্যন্তরে থাকা বোন ম্যারো কিংবা অন্যান্য কোষীয় নমুনা ব্যবহার করি। এটি সময়সাপেক্ষ, কিন্তু নির্ভুল। ডিএনএ পরীক্ষা ও এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মমতাজ আরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষাকে আমরা আজ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিজ্ঞানসম্মত শনাক্তকরণ পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করি। বিশেষ করে অগ্নিদগ্ধ বা বিকৃত মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টই একমাত্র নির্ভুল সমাধান হয়ে ওঠে। দেশে বর্তমানে এ প্রযুক্তি রয়েছে এবং যথাযথভাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার মাধ্যমে শতভাগ নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মুহূর্তে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ কিংবা উত্তরার কোনো বেসরকারি হাসপাতালে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী বা কর্মচারীদের মরদেহ নেই। অজ্ঞাতনামা ছয় মরদেহ সংরক্ষিত রয়েছে ঢাকার সিএমএইচ মর্গে। তার মধ্যে কয়েকটি মরদেহ এতটাই বিকৃত যে ছেলে না মেয়ে বোঝারও উপায় নেই। চিকিৎসকেরা এসব মরদেহ থেকে দাঁতের অংশ সংগ্রহ করেছেন এবং ফরেনসিক ইউনিট ও সিআইডির ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে বিশ্লেষণের জন্য পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button