সম্পাদকীয়

পরিবেশবান্ধব ইটভাটা তৈরিতে জোর দিতে হবে

সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নগরায়ণ ঘটছে। আর নগরায়ণের সঙ্গে দ্ব্যর্থহীনভাবে বাড়ছে ইটের ব্যবহার। সাধারণত ইট তৈরিতে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। জমির উপরিভাগের এ মাটি উর্বর থাকে। কৃষিজমির উপরিভাগের এ মাটিতে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে। ইট তৈরিতে জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের উর্বর মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে যেতে পারে। ফলে খাদ্য সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এখানে। দেশে ইটভাটার সংখ্যা সাত হাজার পাঁচশটি। ইটভাটাগুলোয় বছরে তিন হাজার পাঁচশ কোটি ইট তৈরি হয়। আর এসব ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ১৩ কোটি টন কৃষি মাটি। ইট পোড়াতে লাগে ৫ কোটি ৬০ লাখ টন কয়লা। পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ ও গাছের গুঁড়ি। ফলে একদিকে যেমন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বন উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বায়ুদূষণ হ্রাস ও কৃষিজমি সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ কাজে ব্লক ইটের গুরুত্ব অপরিসীম। ঢাকা শহরের বায়ু দূষণের প্রধান উৎস ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইড ও অক্সাইউ অব সালফার। যা নির্গত হওয়ার ফলে রাজধানীর প্রায় ৫৮ শতাংশ বায়ু দূষণ ঘটছে। বাদবাকি বস্তুকনা ও জৈব যৌগ, জ্বালানি দহন ও শিল্প-কারখানার দূষিত ধোঁয়ার মাধ্যমে ঘটছে। বিশেষকরে ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইডের প্রভাবে ঢাকা এবং আশপাশের বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইট ভাটার প্রভাবে আশপাশে তুলনামূলকভাবে বৃষ্টিপাতও কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে চিমনি দিয়ে নির্গত কালো ধোঁয়া প্রবাহিত হওয়া। কালো ধোঁয়া এবং অধিক কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে আকাশে কোনো ধরনের মেঘ পুঞ্জিভূত হতে পারে না, বরং আকাশের মেঘটাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বৃষ্টিপাতে বিগ্ন ঘটায়। ইটভাটার সারি শুধু ঢাকা জেলার সাভার, কেরানীগঞ্জ নয় এ সারি দেখা যায়, গাজীপুর নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতেও। তবে রাজধানীর আশপাশের জেলা-উপজেলাগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি নজরে পড়ে। ফলে বলা যায় ইটভাটার বিষবাস্প এখন রাজধানীতেও প্রবেশ করছে প্রচুর পরিমানে। ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার প্রভাবে পরিবেশের যে বিপর্যয় ঘটছে এবং সনাতনী পদ্ধতি অবলম্বনের কারণে ভাটার মালিকেরা যে হারে আর্থিক ক্ষতির সন্মুক্ষীণ হচ্ছেন তার হিসাব তাদের জানা নেই। জানলে বোধকরি ইটভাটাকে ‘ইট কারখানায়’ রূপান্তরিত করতে উদ্বুদ্ধ হতেন। পরিবেশ-বান্ধব ইট হিসেবে বর্তমানে ইকো ইটের নামও শোনা যাচ্ছে। বালি ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এই ইকো ইট। এ ইট ব্যবহারে কৃষিজমি রক্ষা পাবে। পাশাপাশি দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ। এ পরিস্থিতিতে পোড়ানো ইটের পরিবর্তে বালি ও সিমেন্টের ইকো ইট নির্মাণ-সামগ্রী হিসেবে পোড়া ইটের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। তাই এই পরিবেশ-বান্ধব ইট তৈরিতে গুরুত্ব দেয়া বাঞ্ছনীয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button