চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের টিয়ারশেল

প্রবাহ রিপোর্ট : সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এক ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রত্যাশীরা। গতকাল সোমবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে এ আল্টিমেটাম ঘোষণা করে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখান থেকে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় দুজন আহত হন বলে খবর পাওয়া যায়। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান করে আন্দোলন শুরু করেন তারা। পরে দুপুর সোয়া ১টার দিকে শাহবাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসবভন যমুনার সামনে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পৌঁছানোর পর তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এরপর পর আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে যমুনার সামনে অবস্থান নেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. ইসরাইল হাওলাদার বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে সভা-সমাবেশ করার বিষয়ে আগেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশের নিষেধ অমান্য করে প্রধান উপদেষ্টার বাসার সামনে যায়। তাদের বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং সেখানে তাদের আমরা থাকতে দেবো না। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। তবে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে খুব বেশি বল প্রয়োগ করাও যাবে না। এর আগে সকাল থেকে শাহবাগ এলাকায় শত শত চাকরিপ্রার্থী উপস্থিত হয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেন। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবি ছাড়াও শর্তসাপেক্ষে বয়সসীমা উন্মুক্ত করারও দাবি করেন তারা। চাকরিপ্রত্যাশীদের এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষার্থী ও পড়াশোনা সম্পন্ন করা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। এমনকি তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চনও। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করা নিয়ে কয়েকজন আন্দোলনকারী দেখা করেন। কিন্তু আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা নিয়ে আন্দোলনকারীরা সন্তুষ্টও নন। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে বের হয়ে আন্দোলনকারীরা গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে যমুনা থেকে বের হয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন ৩৫ চাকরি প্রত্যাশী রাসেল আল মাহমুদ। তিনি বলেন, ভেতরে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে তিনি মাইকে ঘোষণা দেন- আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর সঙ্গে সেখানকার লোকজন কথা বলছেন। কিন্তু আমরা যখন বললাম, তার সঙ্গে আমরা কথা বলব, তখন তারা সময়ক্ষেপণ করছেন। তারা বলছেন, এখন তাকে পাওয়া যাবে কিনা, তিনি দপ্তরে আছেন কিনা, ইত্যাদি। মাহমুদের মাইকে ঘোষণার সময় আন্দোলনকারীরা ‘বয়স না মেধা, মেধা মেধা; ৩০ না ৩৫, ৩৫, ৩৫; আর নয় কালক্ষেপণ, আজই প্রজ্ঞাপন’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। অবস্থান ছাড়ার বিষয়ে রাসেল আল মাহমুদ বলেন, আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে। সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা অবস্থান ছাড়ব না। ৩৫ বছরে চাকরি প্রত্যাশী আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক আবু সাঈদ সাদ জানান, আমরা গত এক যুগ ধরে আন্দোলন করে আসছি। সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আমরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। বিগত সময়ে সরকার পতনের আন্দোলনেও আমরা সক্রিয় ছিলাম। অথচ এখনও আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ দিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি করা হয়। এটিকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার দাবি ও চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়সহ সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।