দ্রব্যমূল্য নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে: পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি
দেশে ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার পতন হলেও দেশে এখনো স্বস্তির খবর মিলেনি। বিশেষ করে সরকার পতনের ফলে জনগণের প্রত্যাশা ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো অধিকাংশ দ্রব্যমূল্যে আগের চেয়েও বর্তমান বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। গত আগস্টের শুরুতে সরকার বদলের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণ ও কাঁচাবাজারগুলোতে চাঁদাবাজি অনেকটা কমে আসে। এতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে ভেবেছিল ভোক্তারা। কিন্তু পণ্যের দাম না কমে উলটো বেড়েছে। চাল, মাছ, মাংস, ডিম, সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে। গত জুলাই থেকে অক্টোবরে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম ৯ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত জুলাই ও অক্টোবর বাজারদর ও রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা ও মহাখালী কাঁচাবাজারের দর পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, গত জুলাইয়ের তুলনায় অক্টোবরের খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১১ শতাংশ দাম বেড়ে মানভেদে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৩ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ৯ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় উঠেছে। বাজারে মাছের সংকট না থাকলেও ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে মাঝারি রুই মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন সব ধরনের সবজির দাম চড়া। গত জুলাই মাসের তুলনায় অক্টোবরে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দামও ৩৩ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে ঢেরশ, করলা, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল ও বরবটির মতো সবজিও এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে, আমদানি শুল্ক কমিয়ে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টা যে খুব বেশি কার্যকর নয়, তা ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্তর বেশ ভালোভাবেই জানান দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি কাজ করেছিল। কিন্তু প্রায় দুই মাস হয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের, বাজারে কোনো স্বস্তির খবর মিলছে না। বরং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দিকেই হাঁটছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বাজার তদারকিতে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করছি।