সম্পাদকীয়

সামাজিক বৈষম্য কমাতে হবে

বিশ্বের কোনো সমাজই শ্রেণিহীন ও স্তরহীন নয়। সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কঠিন কাজগুলো করার জন্যে মেধাবী লোকবল প্রয়োজন। দক্ষ ও উন্নততর প্রশিক্ষণের পর তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হয়। তারা সমাজের অন্যদের তুলনায় বেশি খ্যাতি, বেতন, অবসর ইত্যাদির দাবিদার। এর ফলেই সমাজে স্তরবিন্যাসের উদ্ভব হয়। সামাজিক বৈষম্য সমাজের একটি বাস্তব রূপ। বিশ্বের প্রতিটি সমাজব্যবস্থায় কোনো না কোনোভাবে সামাজিক বৈষম্য বিদ্যমান। সামাজিক বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা কল্পনাও করা যায় না। তবে উন্নত ও অনুন্নত দেশভেদে সামাজিক বৈষম্যের তারতম্য রয়েছে। বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় সামাজিক বৈষম্যের তীব্রতা মারাত্মক। মূলত বৈষম্য শব্দটি সাধারণত বিভিন্ন মানুষের মধ্যে অসম প্রাপ্তির পার্থক্য নির্দেশ করে। বৈষম্যের বিভিন্ন রূপ আছে। সম্পদের বৈষম্য, চিকিৎসা ও দায়িত্বের বৈষম্য, রাজনৈতিক বৈষম্য, জীবন বৈষম্য এবং সদস্যপদ বৈষম্য। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য জাতিগত বৈষম্য, জেন্ডার বৈষম্য এবং সামাজিক অবস্থানের অন্যান্য রূপের সঙ্গে যুক্ত এবং এই রূপগুলো দুর্নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। যখন একটি সমাজের মধ্যে সম্পদগুলো অসমভাবে বিতরণ করা হয় তখনই সামাজিক বৈষম্য ঘটে। কথায় বলে, শরীরের সব রক্ত মুখে এসে জমা হলে তাকে যেমন সুস্বাস্থ্য বলা যায় না, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কবজায় চলে গেলে তাকে টেকসই ও সুষম উন্নয়ন বলা যায় না। তাই প্রতিটি দেশেরই চেষ্টা থাকা উচিত কীভাবে অর্জিত উন্নয়নের সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোগ করতে পারে। উন্নয়নের একটি অভীষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। দুর্নীতি ও উন্নয়ন একসঙ্গে চলতে পারে না। উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটলে সে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হবেই। এ ধরনের সমাজে কিছু মানুষ অনৈতিকভাবে সম্পদ অর্জনের সুযোগ পায়। তারা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে হলেও নিরলস সম্পদ অর্জনের চেষ্টায় রত থাকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ২০০১ সালের রিপোর্টে দুর্নীতির অনুমিত সূচকে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এরপর আরও ৪ বছর বাংলাদেশ দুর্নীতির ধারণা সূচকে শীর্ষস্থানে ছিল। পরবর্তী সময়ে শীর্ষে না থাকলেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা খুব সীমিত। মানুষের মনোজগত ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আনয়নে ব্যর্থ হলে শুধু আইন প্রণয়ন করে কোনো সংকট মোকাবিলা সম্ভব হবে না। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য ন্যায়বিচার, সমতা, মানবাধিকারের গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক বৈষম্য দূর হলে রাষ্ট্রকাঠামো আরও মজবুত ও শক্তিশালী হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button