দিগুণ সুদে বাড়ছে বিদেশী ঋণের চাপ
বিদেশি ঋণে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ। চলতি বছরের আগস্টের শেষে গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি ঋণ পরিশোধের চাপ, বিপরীতে ১৭ শতাংশ অর্থছাড় কমেছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে পরিশোধের পরিমাণ হয়েছে দ্বিগুণ, একই সঙ্গে সুদ পরিশোধও দ্বিগুণের বেশি। গত কয়েক বছরে চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকে নেওয়া কঠিন শর্তের ঋণ এ দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে চার শ কোটি ডলারের ঋণ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ঋণ পরিশোধের চাপও সামনে আসবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে বৈদেশিক ঋণে যে ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করা হয়েছে, তাতে নিকট ভবিষ্যতে সেই ঋণ পরিশোধের একটা চাপ অবশ্যই আসবে। বিদেশি ঋণ ডলারে পরিশোধ করতে হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় একটা চাপ পড়বে। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধ ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করে ২০১২ সালে। ওই বছর বাংলাদেশ দাতাদের কাছে ১১০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৩৫৬ কোটি ডলার। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ ৪২১ কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়ে যাবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মেট্রোরেলসহ কয়েকটা মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরও বাড়বে, যেখানে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে এখনই কিছুটা বেকায়দায় আছে সরকার। নানামুখী চাপের মধ্যে রিজার্ভ ইতোমধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ইআরডির তথ্য বলছে, অর্থছাড় কমলেও বেড়েছে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ। গত অর্থবছরের এই সময়ে যেখানে ৪১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল, এবার সেখানে ৩৬২ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। ইআরডির তথ্য মতে, চার মাসে সবচেয়ে বেশি ৫১ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণছাড় করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৩৩ কোটি ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই চাপ এখনও সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও রিজার্ভ বাড়াতে না পারলে মেগা প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ শোধ শুরু হলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। কয়েক বছরের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের প্রবাহ ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তাই এখন থেকে সরকারের উচিত হবে আপাতত কয়েক বছর বৈদেশিক ঋণের চাপ কমানোর চেষ্টা হিসেবে কম সুদের এবং দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা।