সম্পাদকীয়

কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি

মাদকের কবলে পথশিশুরা

বর্তমানে পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই এখন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত। ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে। বিশেষ করে, রাজধানীর গুলিস্তান, খিলগাঁও, কমলাপুর, মালিবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা এলাকাসহ অলিগলিতে এবং বস্তির অনেক জায়গাতেই পথশিশুদের নেশা করতে দেখা যায়। পুলিশের সামনেই পথশিশুরা ফুটপাতে, ফুট ওভারব্রিজের ওপরে বা নিচে মাদক সেবন করলেও তাদের বাধা দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মতো একেবারে মৌলিক অধিকারের সবগুলো থেকেই বঞ্চিত এসব শিশুরা। দরিদ্র ও সামাজিক অবক্ষয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবহেলা, এমনকি নগরীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মাদকের আস্তানা দিন দিন পথশিশুদের নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে। এখন আট থেকে বারো বছর বয়স্ক শিশুদের রাস্তায় প্রকাশ্যেই ড্যান্ডি সেবন করতে দেখা যায়। এখনই সচেতন না হলে এর ভয়াবহতায় সমাজ হবে কলুষিত। ঘাড়ে চটের বস্তা নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে, কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিক, লোহা, কিংবা পুরোনো জিনিস বিক্রি করে পেট চালায় পথশিশুরা। সারাদিনের সংগৃহীত ভাঙারি বিক্রি করে যে আয় হয়, তা দিয়ে একবেলা খাবার কিনে খায় আর বাকি দুই বেলাই নেশা করে। যা ধীরে ধীরে তাদের এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জীবনে। এ পথশিশুদের কাছে মাদক বিক্রির জন্য একটা সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। ভাঙারি ক্রেতারাই শিশুদের কাছ থেকে ভাঙারি কিনে নেয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের হাতে মাদক তুলে দেয়। এদের মধ্যে শৈশবে নানা পারিবারিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি প্রভৃতির শিকার হয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া শিশুদের সংখ্যাই বেশি। তাদের বেশিরভাগই বিপথে থাকা বড়দের কবলে পড়ে মাদকাসক্ত হয়। আজকের শিশু আগামী দিনের কর্ণধার। অথচ আগামী দিনের কর্ণধারদের এভাবে সমূলে ধ্বংস করে দিচ্ছে ভয়াবহ মাদক। যে শিশুরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। মাদকসেবী পথশিশুদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনা খুব কষ্টের বিষয় নয়। সমাজের উচ্চবিত্তদের সহযোগিতা, জ্ঞানীদের জ্ঞান বিতরণ ও প্রচার প্রচারণার মাধ্যমেই এর সমাধান সম্ভব। পাশাপাশি পথশিশুদের ভয়ংকর মাদকাসক্তি নামক মারণব্যাধি থেকে এ সমাজকে রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাদের শুধুই উপদেশ না দিয়ে বরং সমমনা হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। তাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে, ধূমপান থেকে দূরে রাখতে হবে। মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ কৌতূহল। তাই আগে থেকেই এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে। সরকারকে কঠোর হাতে মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button