ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের প্রতি নজর দিন

প্রাচীনকাল থেকেই মানবসমাজে ভিক্ষাবৃত্তি চলে আসছে। উপমহাদেশেও এর ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের শোষণ, বঞ্চনা এবং নদীভাঙন, দারিদ্র্য, রোগব্যাধি, অশিক্ষা ইত্যাদি কারণে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। বর্তমান সময়ে কিছু মানুষের কর্মবিমুখতা, কর্মে অক্ষম হয়ে যাওয়া এবং এক দল স্বার্থান্বেষী মহলের অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সারাদেশ ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে এ পেশায় যুক্তদের পুনর্বাসনে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করা হয় । কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটছে না, বরং উল্টোটাই দৃশ্যমান । রাজধানীতে কয়েকগুণ বেড়েছে ভিক্ষুকের সংখ্যা। বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলির মোড়ে, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকান, চায়ের দোকান, বিপণিবিতান, বেশি যানজটের সড়ক ও ট্রাফিক সিগন্যাল, মসজিদ, বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনাল, এটিএম বুথ, শপিং মলের সামনে হাজার হাজার ভিক্ষুক ভিক্ষা করছেন। যা অতীতের তুলনায় কয়েকগুন বেশি। ২০১০ সালের আগস্টে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদফতর ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও রাজধানীকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ নামে একটি একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে। ভিক্ষুকদের আবাসন, ভরণ-পোষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। কিন্তু বাস্তবে তা খুব একটা কাজে আসেনি। প্রতিবছর এই পুনর্বাসন বৃথা যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যায় ভিক্ষুকদের বিভিন্ন পুনর্বাসনমূলক নানা কাজে যুক্ত করার পরেও বেশিরভাগ ভিক্ষুকই অভ্যাসবশত ফিরে যান ভিক্ষাবৃত্তিতে। ভিক্ষাবৃত্তি সমাজের জন্য অভিশাপ এবং উন্নতি ও অগ্রগতির পথে অন্তরায়। একটি আদর্শ ও স্মার্ট সমাজ গড়তে হলে সমাজকে ভিক্ষুকমুক্ত করা আবশ্যক। আবার দেখা যায় ভিক্ষুকমুক্ত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পুনর্বাসনের জন্য বিপুল সংখ্যক ভিক্ষুককে আটক করা হলেও দেশে যে ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র আছে তাতে জায়গা না থাকায় তাদের ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে অসহায় ভিক্ষুক থেকে পেশাদার ভিক্ষুকের সংখ্যা বেশি । কয়েক দশক ধরে রাজধানী ঢাকায় গড়ে উঠেছে চক্রের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি। রীতিমতো এটিকে অনেকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভিক্ষুকরা যেমন পথচারীসহ সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে, তেমনি ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে অনেক অপরাধীও নানা অপরাধ সংঘটিত করে। এরা সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা। তাই সরকারকে এসব ভিক্ষুকদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। সবার আগে প্রয়োজন ভিক্ষুক ও তাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের তালিকা তৈরি করা। তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি থানা/উপজেলায় পুনর্বাসনকেন্দ্র খুলতে হবে। যারা কর্মক্ষম তাদের কাজে নিযুক্ত করতে হবে এবং যারা অক্ষম তাদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভিক্ষুক নির্মূলে পুনর্বাসনের সঙ্গে সঙ্গে পেশাদার ও মৌসুমি ভিক্ষুকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, পেশাদার ভিক্ষুকদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের বিত্তবান মানুষ, সমাজসেবক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই শুধুমাত্র ভিক্ষাবৃত্তিকে নির্মূল করা সম্ভব।