সম্পাদকীয়

বালুখেকোদের হাত থেকে নদীগুলোকে রক্ষা করুণ

আধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণে বালু একটি অপরিহার্য সামগ্রী। দেশে যেহেতু শিল্প-কারখানা সহ বিভিন্ন স্থাপনা ও ভবনের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেহেতু আগামীতেও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর পাশাপাশি বালুর ব্যবহার আরও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে দিনেদিনে পরিবেশ ও মানুষের জানমাল ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বাংলাদেশের নদীগুলোর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। অনিয়ন্ত্রিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছে। এতে নদীর নাব্য কমে তীর ধসে যাচ্ছে। বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ভূমিক্ষয় বেড়েই চলেছে। আর এ কারণে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও দিন দিন বাড়ছে। বর্ষাকাল এখনো আসেনি। অথচ পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ প্রধান নদীগুলোতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এমন ভাঙনের জন্য যে কারণগুলোকে দায়ী তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এর ফলে কোনো একটি স্থানে হঠাৎ করে গভীরতা বেড়ে যায়। উজানের পানি এসে সেখানে ঘূর্ণিপাকের সৃষ্টি হয়। সেই ঘূর্ণিপাক তীরে গিয়ে আঘাত করে এবং ভাঙন ব্যাপকতা পায়। প্রশাসন ও রাজনীতিকে ব্যবহার করে নদী থেকে বালু তোলার ঘটনা প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। দেশে অবৈধভাবে বালু তোলার বিরুদ্ধে আইন আছে। সেই আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু খেকোরা অবৈধ ভাবে বালু তুলেই যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে বালু ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তারা এই অবৈধ বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে-মধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে দিলেও বালু উত্তোলন থামছে না। কয়েকদিন পরেই আবার নতুনভাবে শুরু হচ্ছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে দেশের বিপুল পরিমাণ বালুর চাহিদার কারণে দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সিন্ডিকেট, যার বেশির ভাগই অবৈধ। এরা নদী, খাল, পাহাড়ি ছড়া, এমনকি কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হচ্ছে। কিন্তু সেসবের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। এতে সরকার যেমন বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি নদী-ভাঙন, পাহাড়ধস ত্বরান্বিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকারকে নিতে হবে সঠিক পদক্ষেপ। প্রথমত নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কঠোর লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অবৈধ বালু তোলার বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক তদারকি ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অবৈধ বালু তোলার পেছনে থাকা চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধ বালু তোলার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে। নদী থেকে অবৈধ বালু তোলা বন্ধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button