রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি
ঋণ খেলাপি রোধে
দেশে খেলাপি ঋণ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। খেলাপি ঋণ আদায়ে নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উলটো। জানা যায়, খেলাপি ঋণের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দিন দিন অস্বস্তি বেড়েই চলেছে। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় সরকার আইএমএফ থেকে শর্তসাপেক্ষে ঋণ নেয়। সেখানে অন্যতম শর্ত ছিল দেশের ব্যাংক খাতের সংস্কার ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়টি। কিন্তু সে শর্ত পূরণ দূরে থাক, ঋণ বাড়ছে অব্যাহতভাবে। আমরা লক্ষ করছি, দেশের ব্যাংক খাত খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। এর প্রভাব যে শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ওপর পড়ছে তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিল্প খাতও। উদ্বেগের বিষয়, একের পর এক ভয়াবহ ঋণ জালিয়াতি ও খেলাপি-কা- প্রকাশ্যে আসার পরও এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হয়নি। সব মিলে খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাত এখন বহুবিদ রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তারল্য সংকট, প্রভিশন ঘাটতি, মূলধন ঘাটতি এবং আয় কমে যাওয়া। প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার আগে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছিলেন, ‘ঋণখেলাপিদের ধরতে চাই, এবার ধরব।’ কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে খেলাপিদের ধরার পদক্ষেপের কোনো কথাই বলা হয়নি। এমনকি ঋণখেলাপি শব্দটিও বাজেট বক্তৃতার কোথাও উল্লেখ নেই। বরং বাজেটের দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ-এ তিন মাসেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। বলার অপেক্ষা রাখে না, খেলাপি ঋণের এ চিত্র সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আমরা মনে করি, দেশের আর্থিক খাতের দুষ্ট ক্ষত খেলাপি ঋণ না কমে দিন দিন বেড়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া। ভুলে গেলে চলবে না, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে, যার জের টানতে হবে দেশের মানুষকেই। তাই ঋণখেলাপিদের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধতে শুধু আইন কঠোর করাই যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাও জরুরি।