বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা, প্রয়োজন সচেতনতা
![](https://dailyprobaha.com.bd/wp-content/uploads/2023/11/post-fp.webp)
বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা, রাজশাহী থেকে শুরু করে কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ। আর দক্ষিণ-পূর্ব দিকটা নি¤œঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়ে থাকে।’যে কোন সময় বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আট মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিককালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আলোচনায় আসছে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় থাকা ঢাকার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে। ঘনবসতিপূর্ণ শহরটির ঝুঁকি কমাতে নানা পরিকল্পনা নেয়া হলেও কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন করা হয়নি। ভূমিকম্পের এমন ঝুঁকি থাকলেও মোকাবিলার প্রস্তুতি অনেকটাই কম। বহু পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা ভূমিকম্প ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। উনিশশো নিরানব্বই সালে তুরস্কে বড় ধরণের একটি ভূমিকম্প হয়। ঐ ভূমিকম্পের পর তুরস্কের সরকার ভূমিকম্প মোকাবেলায় তহবিল গঠনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু সেসময় যারা নিয়ম না মেনে ভবন তৈরি করেছিল, তাদের শাস্তির আওতায় না এনে অল্প কিছু জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। যার ফলে প্রায় ৬০ লাখ ভবন অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায়। সরকারের এই দুর্নীতি আর অনিয়মের ফলেই সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ব্যাপক আকারে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশেও বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই ভবন তৈরির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে। রাজধানীর পুরান ঢাকায় দেখা যায়, অল্প জায়গায় অনেক মানুষের বসবাস। ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে একটি আরেকটির গা ঘেঁষে। যে ভবনটি তিনতলা করার কথা সেটি করা হয়েছে চার-পাঁচতলা। দুর্বল অবকাঠামো এবং পুরনো জীর্ণশীর্ণ। একেকটি ফ্ল্যাটে থাকে ১০-১৫ জন। বাণিজ্যিক কেন্দ্র হওয়ায় সেখানকার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাই দিনরাত মানুষের ভিড় লেগে থাকে। রাজধানীতে ভূমিকম্প আঘাত হানলে ভবনগুলো থেকে তাৎক্ষণাৎ সরে যাওয়ার ব্যবস্থাটুকুও নেই। এছাড়া ঢাকায় ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। ভূমিকম্প থামানোর কোন উপায় না থাকলেও এই দুর্ঘটনার আগে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেয়া সহজ হবে। ভূমিকম্প হলে স্মার্টফোনের মাধ্যমে জরুরি খবর পাঠানোর ব্যবস্থা করা, ভূমিকম্প বিষয়ক গেমের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি করা সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।