সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ রোধে কঠোর হোন

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা

বায়ুদূষণের কারণে মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হয়। শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়ে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ ক্যান্সার, হৃদরোগসহ আরো অনেক রোগের কারণ হয়। এসব রোগে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। আবার মৃত্যু না হলেও বহু মানুষ অসুস্থ ও কর্মক্ষমতাহীন হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করে। তবে বায়ুদূষণে সবচেয়ে বেশি পরিণতি বরণ করতে হচ্ছে শিশুদের। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে ২০২১ সালে বাংলাদেশে দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বৈশ্বিক বায়ুমান পরিস্থিতি ২০২৪ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, একই সময়ে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ হাজারের বেশি। ইউনিসেফের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে গবেষণাটি পরিচালনা করে হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বায়ুদূষণজনিত বৈশ্বিক যে চিত্র পাওয়া যায়, তা-ও অত্যন্ত মর্মান্তিক। ২০২১ সালে সারা বিশ্বে এ কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী সাত লাখেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুরাই বায়ুদূষণের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর কারণ তাদের দুর্বল সহনক্ষমতাসম্পন্ন বিকাশমান ফুসফুস। এ ছাড়া বায়ুদূষণের প্রভাবে অপরিণত অবস্থায় শিশুর জন্মগ্রহণ, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ এবং জন্মের পর হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশসহ আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে নিম্নশ্বাসনালির সংক্রমণে যত শিশু মারা যায়, তার ৪০ শতাংশই মারা যায় বায়ুদূষণের কারণে। এ ক্ষেত্রে বাইরের বায়ুদূষণ যেমন দায়ী, তেমনি দায়ী ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ, যার প্রধান কারণ রান্নার অনুন্নত পদ্ধতি এবং ঘরে বায়ু চলাচলের অভাব। শিশুদের ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ই শুরু হয়। জন্মের পর শিশুদের বিকাশমান ফুসফুস বায়ুদূষণে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় প্রচলিত ইটভাটাগুলোকে। বায়ুদূষণের জন্য দায়ী কালো ধোঁয়ার ৩৮ শতাংশই নির্গমন হয় ইটভাটা থেকে। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা যানবাহন থেকে নির্গত হয় ১৯ শতাংশ। অথচ দূষণের এই প্রধান দুটি উৎস নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রায় কিছুই করছি না। গ্রামাঞ্চলে এখনো ইটভাটার ছড়াছড়ি। রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। এ ছাড়া আছে নিয়ম না মানা নির্মাণকাজ, অনুন্নত কলকারখানা, গাড়ির টায়ারসহ নানা রকম প্লাস্টিক পোড়ানো, খোলা জায়গায় আবর্জনা পোড়ানোসহ আরো অনেক কর্মকা-। এসব দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে। আর অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি বায়ুদূষণ রোধে সরকারের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button