সম্পাদকীয়

খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে হবে

খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতের এক বড় সমস্যা। ব্যাংক খাতে কমছে না খেলাপি ঋণ; বরং উল্টো বেড়েই চলেছে। অতীতে নানা উদ্যোগ গ্রহণের পরও এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সুফল মেলেনি। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির কারণে ব্যাংক খাত ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। বছরের পর বছর দেশে ঋণখেলাপিদের নানা রকম ছাড় দেওয়ার কারণেই পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ব্যাংকে সুশাসনের অভাবে মন্দ ঋণের পাশাপাশি বাড়ছে অর্থ পাচারও। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করেছে। এছাড়াও খেলাপি ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর আলোচনা হয়। বিতর্ক হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। এর একটি কারণ হতে পারে ঋণখেলাপিরা সরকারের চেয়েও ক্ষমতাবান, যাদের ওপর হাত দেওয়ার সাহস কারও নেই। এই ঋণখেলাপিরাই ব্যাংকের টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা বলা হলেও মূলত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা। এবং উচ্চমূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, খেলাপি ঋণ, বিদেশে অর্থ পাচার, আমদানি-রপ্তানিতে অস্থিরতা, উৎপাদন ও সরবরাহে বিপর্যয় ইত্যাদি যেসব সমস্যা দেশের অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে, এগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত। এসব সমস্যার মূলে রয়েছে দুর্নীতি। তাই কাজেই দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, তাদের বিরুদ্ধে যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যেহেতু ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা প্রভাবশালী, সেহেতু চাইলেই ব্যাংকের পক্ষে তাদের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে না। এ সমস্যার সমাধানে দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের রাজনৈতিক বা দলীয় পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য কর্তৃপক্ষকে সেই ক্ষমতাও প্রদান করতে হবে। এবং আমাদের দেশে ব্যাংক খাতের বড় এক সমস্যা যেহেতু দুর্নীতি। ফলে এ খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। যারা ঋণখেলাপি, তাদের উচিত ঋণ পরিশোধে নৈতিকতার পরিচয় দেওয়া। দেশের আর্থিক খাতকে রক্ষা করতে হলে এ বিষয়ে সরকারকেও কঠোর থেকে কঠোরতম অবস্থান নিতে হবে। কোনো প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান মহলকে ছাড় দেওয়ার জন্য দেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু আর্থিক খাতকে সংকটাপন্ন করে তোলা দেশ, অর্থনীতি ও সরকারের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button