বাজারের এই অবস্থা আর কতদিন?
অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ
গত দুই বছর বাজারে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম বাড়ানো হয়েছে। একই সময়ে ডলার সংকটের কারণেও পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে, কমেছে টাকার মান। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ভোক্তার আয় বাড়েনি সমান হারে। বরং ভোক্তার আয় যে হারে বেড়েছে, এর চেয়ে বেশি বেড়েছে ভোক্তার খরচ। ফলে ভোক্তাকে সংসার চালাতে টাকার সংকটে ভুগতে হয়েছে। কমাতে হয়েছে জীবনযাত্রার মান। টানা দুই বছর এ প্রবণতা চলায় ভোক্তাদের ঋণগ্রস্ততা যেমন বেড়েছে, তেমনি তারা ঋণ গ্রহণের সক্ষমতাও হারিয়েছেন। সব মিলে সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। বর্তমানেও এ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। মার্চে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৪ কোটি ১০ লাখ পরিবারের ২৬ শতাংশই মৌলিক চাহিদা মেটাতে ঋণ করে চলছে। অর্থ সংকটে মৌলিক খাদ্য কেনা কমিয়ে দেওয়ার ফলে দরিদ্র মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা, এখন তা ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০০ টাকার মূল্যমান এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭ থেকে ৫৩ টাকায়। টাকার এই অবমূল্যায়ন ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে, বাড়িয়ে দিয়েছে পণ্যের দাম। এরপর রয়েছে নিত্যপণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি। বিষয়টি সম্পর্কে গণমাধ্যমে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়েনি। বরং দ্রব্যমূল্যের পাগলাঘোড়া লাগামহীন হয়েই ছুটছে। এটা সত্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। অন্যান্য দেশের মতো এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। তবে একে সুযোগ হিসাবে নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পণ্যমূল্যের দাম যে হারে বৃদ্ধি করে, তা চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ঈদুল আজহার পরও মসলাজাতীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে ক্রমেই বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বাজারে সব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম কেন বাড়ছে, তা স্পষ্ট নয়। পণ্যমূল্য যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, এর দায় তাদের ওপরই বর্তায়। বাজার তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাতের বিষয়টি বহুল আলোচিত। ভুলে গেলে চলবে না, শর্ষের ভেতরে ভূত থাকলে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন, কাক্সিক্ষত সুফলপ্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা থেকে যাবে। দেশের মানুষ যাতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে, সেজন্য নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই হবে। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি অথবা বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাকে চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।