সম্পাদকীয়

অবৈধ নির্মাণ কাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন

আমাদের দেশে মানুষের অচেতনতার কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনা যেমন প্রাকৃতিক কারণে হয়ে থাকে ঠিক তেমনি মানুষের অসচেতনতার কারণেও হয়ে থাকে। দেশের অধিকাংশ মানুষই আইন অনুযায়ী চলছে না। বরং তারা নিজেদের কূটকৌশলে অনিয়মের রাস্তায় হাঁটছে। ফলে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বর্তমান যুগে প্রতিযোগিতার মত বাড়ছে ভবন নির্মাণ কাজ। এই ভবনগুলো কতটুকু গুণগত সম্পূর্ণ তা নিয়ে আছে প্রশ্ন। চলতি বছরের প্রথম দিকে রাজধানীর একটি হোটেলে আগুনে অন্তত ৪৬ জন মানুষ মারা যায়। তবে এই দুর্ঘটনায় ৪৬ মানুষ মারা যাওয়ার পিছনে অভিযোগ উঠছে ভবন কর্তৃপক্ষের অসচেতনতার। এভাবে সারাদেশে শত শত দুর্ঘটনা ঘটছে ভবন কর্তৃপক্ষের অসচেতনতার কারণে। এর মধ্যে অন্যতম হল নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ। রাজধানীর ঢাকার মত এখন দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে পাঞ্জা নিয়ে গড়ে উঠছে ছোট বড় ভবন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ভবনগুলো কি সঠিক নিয়ম মেনে তৈরি করা হচ্ছে? সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, ধারাবাহিক তদারকি না থাকায় খুলনা নগরীতে গড়ে উঠছে নকশাবহির্ভূত বহুতল আবাসিক ভবন। দুই কাঠা জমিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাস্তার দিকে পাঁচ ফিট, দুই পাশে দুই ফিট সাত ইঞ্চি ও পেছনের দিকে তিন ফিট তিন ইঞ্চি জায়গা খালি রাখার নির্দেশ থাকলেও তা কেউ মানছে না। জমির আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি ছেড়ে দেওয়া জমির পরিমাণও বাড়বে। কিন্তু নিজের জমি ছাড়িয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভবনের সামনের অংশ ড্রেন, ফুটপাত, রাস্তার দিকে বাড়িয়ে করা হয়। কোনোটি চার তলা অনুমোদন নিয়ে পাঁচ তলা করা হয়েছে। পাশাপাশি দুই ভবনের মাঝেও নিয়ম অনুযায়ী খালি রাখা হয়নি। ফলে গাদাগাদি করে গড়ে ওঠা এসব ভবনের বাসিন্দারা একদিকে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সুবিধা বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে নকশাবহির্ভূত স্থাপনায় সৌন্দর্যহানি অগ্নিঝুঁকি, পানি নিষ্কাশন ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পত্রপত্রিকার খবরাখবর থেকে জানা যায়, খুলনায় স্থাপনা নির্মাণের নকশা অনুমোদন করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির যথাযথ তদারকি না থাকায় সোনাডাঙ্গা, টুটপাড়া, লবণচরা, রূপসা, টুটপাড়া, বয়রা, শেখপাড়া, নবীনগর, বানিয়াখামার, গোবরচাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নকশাবহির্ভূত ভবন গড়ে উঠছে। অভিযোগ রয়েছে, কেডিএ আওতাধীন ৮২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২০ পরিদর্শক থাকার কথা থাকলেও কাজ চালানো হয় পাঁচ জনকে দিয়ে। ফলে একজন পরিদর্শককে প্রায় ১৬৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার ভবনগুলো পরিদর্শন করতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে এর খেসারত খুব ভয়াবহ হতে পারে। বাংলাদেশ প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে থাকে। এর মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। ভূমিকম্প এসব অপরিকল্পিত ভবনের জন্য মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাই পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য অননুমোদিত ও অবৈধ নির্মাণ কাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা জরুরি হয়ে পড়ছে। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগী হবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button