সম্পাদকীয়

সুন্দরবনে হরিণ শিকারিদের দৌরাত্ম্য চরমে

বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এতে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাজে বিঘœ ঘটে। এ সুযোগে শিকারিরা হরিণ নিধনে মেতে উঠেছে। বনের আশপাশ এলাকার শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে নিয়মিত হরিণ শিকার করে মাংস বিক্রি করছে। ফাঁদ পেতে, বিষটোপ দিয়ে এবং গুলি করে হরিণ হত্যা করা হচ্ছে। যদিও সুন্দরবনে বন্য প্রাণীর শিকার ও চোরাচালান নতুন কিছু নয়। জেল বা জরিমানা-যতই ব্যবস্থা নেওয়া হোক না কেন, শিকারিদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। বিস্তৃত সুন্দরবনে অনেকগুলো শিকারি চক্র তো আছে, এর সঙ্গে যুক্ত আছে চোরাচালানকারী চক্রও। ফলে কীভাবে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী শিকার ও পাচার বন্ধ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সুন্দরবন-সংলগ্ন এমন অনেক গ্রাম আছে, যেখান থেকে নদী পার হলেই গহিন জঙ্গলে ঢুকে যাওয়া যায়। গোটা সিন্ডিকেটের একদল থাকে সুন্দরবনের ভেতরে, আরেকদল পরিবহণ ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। চড়া দামে হরিণের মাংস বিক্রির জন্য ক্রেতাদের কাছে জীবন্ত হরিণ নিয়ে তাঁদের সামনেই জবাই করা হচ্ছে-এমন ঘটনাও ঘটছে। আবার বনের মধ্যে জবাই করা হরিণের ছবি-ভিডিও অনলাইনে পাঠানো হচ্ছে বাইরের ক্রেতাদের কাছে। যে কারণে অনেকের কাছে হরিণের মাংসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই চক্রের অপতৎপরতা ওপেন সিক্রেট হলেও তাদের দৌরাত্ম্য থামাতে কর্তৃপক্ষের কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। এভাবে নির্বিচারে হরিণ শিকার চলতে থাকলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পরবে। তাই জীববৈচিত্র রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা। বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি সঠিক নজরদারি না দেয়, তাহলে এই অপকর্ম চলতে থাকবে। তাই সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে পারলে সুন্দরবনে হরিণ শিকারিদের অপতৎপরতা ঠেকানো যাবে। এবং সুন্দরবনের রেঞ্জগুলোর কাছে শিকারিদের একটি দীর্ঘ তালিকা আছে। তবে তালিকার বাইরেও অনেক মানুষ শিকারের সঙ্গে যুক্ত। এখন তালিকার ভেতর-বাইরের শিকারিসহ গোটা সিন্ডিকেট ধরতে না পারলে সুন্দরবনে বন্য প্রাণী শিকার কখনোই বন্ধ হবে না। যথাযথ পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। এখানে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বা বনরক্ষী এর সাথে যুক্ত থাকতে পারে। তবে কোনো অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বা বনরক্ষী থাকলে তাঁকেও ছাড় দেওয়া যাবে না। চোরাশিকারীদের সঙ্গবদ্ধ দলকে এবং হরিণ শিকারে উৎসাহ দাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে প্রতিহত করতে হবে। নয়তো হরিণ শিকার মহামারি আকার ধারণ করবে। হারিয়ে যাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য মায়াবী চিত্রা হরিণ।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button