সম্পাদকীয়

বাড়ছে কন্যাশিশু নির্যাতন, প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি

মানবসমাজে দিন দিন অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিশেষ করে নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করছে। একদিকে সমাজ ও সভ্যতা যত এগিয়ে যাচ্ছে, ততই যেন এ প্রবণতা বেড়ে চলেছে; অন্যদিকে নারীর অবমাননা বা নারীর ওপর নির্যাতন সমাজে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায়, ঘরে-বাইরে-কর্মক্ষেত্রে কোনো জায়গায়ই নারীরা নিরাপদ নয়। সব জায়গায় নারীরা নির্যাতনের শিক্ষার হচ্ছে। নারী নির্যাতন রোধে দেশে বহু আইন রয়েছে। তবুও কেন এত সহিংসতা? সম্প্রতি জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের করা একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ মাসে ২২৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৮১ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছেন ১৩৩ জন কন্যাশিশু। পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৮৭ জন কন্যাশিশু। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছর বয়সের শিশুরাও এই জঘন্যতম অপরাধের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ঘটনা নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া ৩২ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ৮ মাসে মোট ২৮ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, গত ৮ মাসে ১৩৩ জন কন্যাশিশু আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এর পেছনে মূলত যে কারণগুলো কাজ করেছে, তা হলো হতাশা, পারিবারিক মতানৈক্য বা দ্বন্দ্ব, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ। এই সময় ৮১ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব, শত্রুতার জের, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন ইত্যাদি। অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১৯ জন কন্যাশিশু। গৃহশ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১০টি। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ২০ জন কন্যাশিশুর। ১৮৭ জন কন্যাশিশুর পানিতে পড়ে মৃত্যুবরণের তথ্য পাওয়া গেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য গত তিন দশকে বাংলাদেশে বিভিন্ন আইন হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বরে সর্বশেষ সংশোধন করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে নারী নির্যাতন আইন সংশোধন করা হলেও সেখানে আইনের অনেক ফাঁকফোকর ও বৈষম্যমূলক ধারা রয়েছে। এ সহিংসতা বন্ধের জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ যেমন দরকার, তেমনি সামাজিক সচেতনতাও প্রয়োজন। এজন্য সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে শিশু ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সেই সঙ্গে আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button