সম্পাদকীয়

আশ্বাস নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাই কার্যকর ব্যবস্থা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারে এখনো স্বস্তি ফেরেনি। বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। মানুষ এখন বাজারে গিয়ে হাঁসফাঁস করছেন। বছরের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ। নিত্যপণ্য থেকে শাকসবজির দাম ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সব মিলিয়ে নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট কমেনি। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম কমানোর জন্য পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবেদন করেছিল। এনবিআর পেঁয়াজ ও আলুর শুল্ক কমিয়েছে। এ দুটি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। নিত্যপণ্যের দাম কমাতে এর বাইরে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বর্তমানে চালের দাম পূর্বের তুলনায় দুই থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে- যা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। কারণ তাদের উপার্জনের সিংহভাগই ব্যয় হয় চাল কেনার পেছনে। পাশাপাশি ডাল, ডিম, মাছ, মাংস, আলু, পিঁয়াজ ও মরিচ ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় সব দ্রব্যের অগ্নিমূল্য তো রয়েছেই। অভিযোগ আছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে দিতে হচ্ছে চাঁদা, পাশাপাশি বাজারেও নানাভাবে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। যার ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। আবার অনেক সময় ব্যবসায়ীরা বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। অর্থাৎ পণ্যের উৎপাদনে কোনো ঘাটতি না থাকলেও বা সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকার পরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য গুদামজাত করে সংকটের কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করেছেন সেসব পণ্য। এতে ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সিন্ডিকেট এখন একটি নিয়মিত এবং আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রয়োজন দলগতভাবে কাজ করা। পণ্য আমদানিকারক থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবার কার্যক্রমের প্রতি লক্ষ্য রাখা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে কে কোথায় কীভাবে কারসাজি করছে, পণ্য গুদামজাত করছে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সে সবকিছুর ওপর নজর রাখতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করলে অনেক গোপন তথ্যই ওঠে আসতে পারে, যা দ্রব্যমূল্যের অতিরিক্ত দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য সহায়ক হবে। দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বরত সব প্রতিষ্ঠানকে একত্র করে শক্তিশালী একটি বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে বাজার সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব বিলীন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হতে পারে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে ফিরবে সচ্ছলতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সহনীয় মূল্যই পারে মানুষকে স্বস্তি দিতে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ না নিলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকট বাড়বে ছাড়া কমবে না।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button