রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, সতর্কতা বাড়াতে হবে
সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা সতর্কতার পরও বিভিন্নভাবে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিনে নানাভাবে ১০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য জানালেও সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা এর সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার কথা বলছেন। বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা- এমন খবর জানা গেলে সেটি কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা, এমনিতেই বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এরপর প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমতাবস্থায় আবার যদি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে তবে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিগত কয়েক মাসে অন্তত ১৮ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘গত তিন মাসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে এবং আমরা জানতে পেরেছি যে, আরও কয়েক হাজার (রোহিঙ্গা) প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ। তাই এখন সীমান্তে নজরদারি-প্রহরা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো উপায় আমাদের সামনে নেই।’ সম্প্রতি বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হলেও তাদের ফাঁকি দিয়ে সংঘবদ্ধ দালালরা রাতের আঁধারে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে সহায়তা করছেন। সরকারি একটি সংস্থার তথ্য বলছে, রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়ার ৩০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অন্তত ৪৭৫ জন রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশের তথ্য পেয়েছেন তারা। এই রোহিঙ্গারা নানাভাবে ক্যাম্পে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ির পাশাপাশি ভাড়া বাসায় অবস্থান নিয়েছে বলে জানতে পেরেছে সংস্থাটি। খন এটা সামনে আসছে যে, ছয় মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। আর এখন সংঘাত সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু এই চাপ কতদিন সইবে? এমন প্রশ্ন বারবার সামনে এসেছে। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে, এরই মধ্যে আবার যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসছে, তখন তা কতটা উৎকণ্ঠার সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরকে কেন্দ্র করে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের অনেকেই দালালদের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন বা চেষ্টায় আছেন বলে জানা যাচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের স্থল ও নৌপথে সীমান্তের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। সংগত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের এটা যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।