সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অবহেলা নয়
দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার লোক নিহত ও ৩৫ হাজার আহত হচ্ছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এআরসি) গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজার যানবাহনে মৃত্যুর হার ৮৫ দশমিক ৬। বেসরকারি এক হিসাব বলছে, ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪ হাজার ২৬৯ জন। সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিয়তি বলেই মনে করছেন সাধারণ যাত্রীরা। রাজধানী ঢাকা ও তার বাইরে সড়ক-মহাসড়কগুলোও বেহাল দশা। অদক্ষ চালক আর ফিটনেসবিহীন বাস প্রতিনিয়তই চলাচল করছে। নেই কোনো নজরদারি। চালকদের বেপরোয়া যান চালানোর কারণে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণহানি ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেই সরকারের কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। শুধু মামলা আর গাড়ি জব্দ করাতেই আটকে আছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আবার তদন্তের নামে বছরের পর বছর ফাইলবন্দি হয়ে আছে সড়ক দুর্ঘটনার মামলাগুলো। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের লাশের মিছিল আরো দীর্ঘ হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এত আইন হলো, এত পরিকল্পনা নেওয়া হলো, কিন্তু কোনো কিছুই কাজে লাগছে না। এটা যেমন আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা, তেমনি সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহেলাও বটে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে ৩৯২টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, মারা গেছেন ৪২৬ জন। এর মধ্যে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা, যা মোট দুর্ঘটনায় ৪১.৮৩ শতাংশ। আর নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৭৯ জন, যা মোট মৃত্যুর ৪২ শতাংশ। এর অর্থ মোটরসাইকেলচালকেরা কোনো নিয়মরীতিই মানছেন না। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় অনেক সড়কে খানাখন্দ বেড়েছে। কোনো কোনো সড়কে যান চলাচল করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। খোদ ঢাকা শহরের বেশির ভাগ সড়ক বেহাল। এ অবস্থায় দ্রুত সড়ক মেরামত করার প্রয়োজন থাকলেও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহণ আইন জারি হওয়ার পর চালকদের মধ্যে কিছুটা হলেও ভয় ছিল, দুর্ঘটনা হলে শাস্তি পেতে হবে। পরবর্তী সময়ে আইনটি সংশোধনের নামে এমন অবস্থায় আনা হয়েছে যে তাদের মধ্যে সেই ভয়ভীতি আর নেই। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এই আইন পাসের পর সড়কে দুর্ঘটনা কমবে, যাত্রী ও পথচারীরা নিরাপদ থাকবেন। কিন্তু বিগত সরকার নানা মহলের চাপে সেই আইনটিকে কাটছাঁট করে একটি অকেজো আইনে পরিণত করে। ফলে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি আরও বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সড়ক ব্যবস্থাপনা নিরাপদ করতে দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ এখনো অনুপস্থিত। তাই সরকারের উচিত এই দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।