সম্পাদকীয়

খাদ্যপণ্যের দাম কমবে কবে?

সম্প্রতি খাদ্যপণ্যের বেজায় দাম বৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের মানুষের অবস্থা নাকাল। অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, নিত্যপণ্যের দাম না কমলে, খাদ্য তালিকায় আরও কাটছাঁট করতে বাধ্য হবেন স্বল্প আয়ের মানুষ। পুষ্টিবিদদের মতে, দেশে একদিকে যেমন কমছে উৎপাদন ক্ষমতা, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। বাঁচতে হলে দরকার সুষম খাদ্য — কথাটা জানেন সবাই। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পর্যাপ্ত খাদ্য নিশ্চিত করাও যেন কারও কারও জন্য বিলাসিতা। অনেকের ঘরে আবার মাঝেমধ্যেই জ¦লে না উনুনও। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ; এখন আবার সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে আগুনের বেজায় তাপ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, দেশে অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কম করে হলেও এক কোটির মতো। ব্যয় বাড়ায় চাপের মধ্যে আছে সাধারণ মানুষ। অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ হার্ট ও কিডনির সমস্যাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এটি তাদের কর্মক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে। সুস্থ থাকার জন্য যে পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা উচিত, সেটি মানুষ পাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের দামের প্রভাবে অনেকেরই পুষ্টিকর খাদ্য কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে তাদের স্বাস্থ্যের ওপর। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের এবারের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। গত বছর বাংলাদেশের মোট নম্বর ছিল ১৯; ১২৫টি দেশের মধ্যে ঠাঁই হয়েছিল ৮১তম স্থানে। এর অর্থ বাংলাদেশ ক্ষুধা সূচকে যতটা অগ্রগতি করেছে, অন্যান্য দেশ তার চেয়ে অনেক বেশি উন্নতি করেছে। একটি দেশে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার-এই চার মানদ- বিবেচনায় নিয়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয়-যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এই সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়। বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে কোনো দেশের স্কোর শূন্য হওয়ার অর্থ সেখানে ক্ষুধা নেই। আর স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। ক্ষুধা সূচক ১০ থেকে ১৯ দশমিক ৯-এর মধ্যে থাকলে ওই দেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধায় আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ চলতি বছরের আগে ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি করেছিল। মানুষের যে পরিমাণ আয় বেড়েছে, ব্যয় বেড়েছে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাসাভাড়া ইত্যাদি মিটিয়ে খাদ্যের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে পারেন না অধিকাংশ মানুষ। ফলে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগতে হয় তাদের। এই অবস্থার অবসান করতে হলে সার্বিক অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন, যদিও অন্তর্বর্তী সরকার অন্যান্য বিষয়ে কমিশন করলেও অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন করেনি। ক্ষুধা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে এখন যে কাজটি করতে হবে, তা হলো বিকল্প পথে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানো। বাজারের দামের চেয়ে তা কম দামেই বিক্রি করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button