মানব পাচার বন্ধে কঠোর হোন
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মানব পাচারের হালচাল নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের প্রতিবেদনেও মানব পাচার নির্মূল প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অগ্রগতি নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক বলছে, মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগান এবং ইরানিরা। বহুদিন ধরে এরা মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে তুলেছে একটি চক্র। তারা শুরুতে কাউকে টাকা ছাড়াই, কাউকে ৪০-৫০ হাজার টাকা আবার কাউকে ২-৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। যারা কম টাকা দিতে চায় তাদের আকর্ষণীয় শর্ত দিয়ে বলা হয়, গন্তব্যে পৌঁছে বাকি ২-৩ লাখ টাকা কাজ করে পরিশোধ করতে হবে। ব্র্যাকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই চক্রের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। লিবিয়া, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের জঙ্গলের মধ্যে এবং শহর ও গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় তাদের ভাড়া করা বাসা আছে, যেগুলো টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকে ছাড়া পেতে আটক ব্যক্তির স্বজনদের দেশে দিতে হয় লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ। মুক্তিপণের টাকা না দিলে হত্যা করে লাশ পুঁতে ফেলা হবে বলে বার বার হুমকি দেওয়া হয়। ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও দালালরা ভুক্তভোগী যুবকদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে তুলে দেয় মাফিয়াদের হাতে। তাদের খপ্পরে পড়ে শুধু অর্থ নয়, প্রাণও দিতে হচ্ছে অনেক যুবককে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের আমানত শাহ বিমানবন্দর হয়ে দুবাই, মিশর ও লিবিয়া রুট দিয়ে ইতালিতে পাঠানোর নামে মূলত মানব পাচার করছে বেশ কয়েকটি চক্র। জাতিসংঘের অভিবাসন-বিষয়ক সংস্থা আইওএমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সব এলাকার বাসিন্দারাই মানব পাচারের শিকার হয়। তবে ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট অঞ্চলের মানুষ বেশি পাচার হয়। জেলা হিসেবে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হবিগঞ্জ থেকে সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের ঘটনা ঘটে। এসব জেলা থেকে প্রতি লাখে দেড় জনের বেশি মানুষ পাচারের শিকার হয়। যে-সব এলাকার সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বেশি সেসব এলাকার বাসিন্দারাই বেশি মানব প্রচারের শিকার হচ্ছে মর্মে আইওএম ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন ইন বাংলাদেশ’ নামক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে। মানব পাচার একটি বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বাংলাদেশে এ চক্রটি খুবই সক্রিয়। বাংলাদেশের মানুষদের তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এবং প্রেমের প্রলোভন ও উন্নতজীবন যাপনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাচার করাটা অনেক সহজ। এজন্য পাচারকারী ও দালালদের পরিচয় জানার পর তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া, বিশেষ করে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা এবং যথাসম্ভব বিচার করে আইনের শাসন নিশ্চিত করা গেলে পাচারকারীরা হয়ত কিছুটা থামবে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের মানব পাচার বন্ধে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।