সাইবার নিরাপত্তায় জোর দিন
ইন্টারনেটের মূল চাবি হচ্ছে ডাটা। ডাটা ছাড়া ইন্টারনেট পুরোপুরি অচল। কিন্তু এই ডাটা সুরক্ষা দিতে আমরা বরাবরি উদাসীনতা দেখাই। বর্তমানে আমরা ইন্টারনেটে প্রায় বিভিন্ন প্রকারের সাইবার হামলা বা হ্যাকিং এর কথা শুনে থাকি। সাধারণত অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে আমাদের অনিহার কারণে এই ধরনের হামলার হতে হয়। এতে অনেক সেনসিটিভ ডাটা হ্যাকারের হাতে চলে যায় অথবা ধ্বংস হয়ে যায়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা। সাইবার সিকিউরিটি মূলত হচ্ছে সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ককে হ্যাকারের হাত থেকে রক্ষা করা। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের সকল তথ্য অনলাইনে জমা হচ্ছে। হ্যাকার আমাদের এই পার্সোনাল ডাটাকে জিম্মি করে ব্ল্যাক মেইল এর মতো নিকৃষ্ট কাজ করছে। যা আমাদের সামাজিক অবস্থান ও মানুষিক শান্তিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আরও বলতে গেলে সাইবার সিকিউরিটি হলো ডিজিটাল ডিভাইস, নেটওয়ার্ক, এবং সিস্টেমকে সাইবার আক্রমণ, অননুমোদিত প্রবেশ, তথ্য চুরি, তথ্য বিকৃতি, এবং ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখার প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তির সমষ্টি। সাইবার সিকিউরিটি মূলত ইন্টারনেট বা সাইবারস্পেসে ব্যবহৃত সব ধরনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে সুরক্ষিত করার কার্যক্রমকে বোঝায়। সারাবিশ্বেই বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রযুক্তির নিরাপত্তার ঝুঁকি। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়; ইন্টারনেট এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যেমন জনজীবনকে সহজ করেছে, তেমনি দেশের প্রতিটি খাতকে সাইবার অপরাধীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিমাসে প্রায় ১০ হাজার সাইবার আক্রমণ বাংলাদেশে সরকারি সার্ভারে হয়। বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত না থাকলেও সংখ্যাটি বেড়েছে বলেই অনুমান করা যায়। অপ্রতুল সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা ও দুর্বল প্রযুক্তি এই ঝুঁকিগুলো আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উন্নত দেশগুলো সাইবার নিরাপত্তাকে সীমান্ত নিরাপত্তার মতোই, কখনও তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। কারণ সাইবার নিরাপত্তা ব্যাহত হলে নাগরিক জীবন এবং দেশের সামগ্রিক কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। উন্নত বিশ্বে সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের কারণে নাগরিকদের তথ্য চুরি হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তা প্রকাশ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ এখনও দেখা যায় না। এর ফলে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সংলাপ, গবেষণা এবং সাইবার হামলার প্রকৃত তথ্য ও পরিসংখ্যান পাওয়ার ক্ষেত্রে সংকট রয়ে গেছে। বাংলাদেশে সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখনও উন্নত সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রহণে পিছিয়ে আছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পুরোনো বা নি¤œমানের সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যা তাদেরকে সাইবার অপরাধীদের সহজ টার্গেটে পরিণত করে। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কার্যকারিতা এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এসব সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে কার্যকর সমাধান নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।